লাবনী ইয়াসমিন
দেশের একজন রাষ্ট্রপতি জাতির সাথে কি মজাটাই না নিলেন? রাষ্ট্রপতি কি কোন প্রধানমন্ত্রীর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য হয়েছেন? নাকি দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য, মেরুদন্ড সোজা করে স্পষ্টতা বজায় রাখার জন্য? যখন আপনার নিজের চেয়ার বাঁচানোর তাগিদ আসে তখন রঙ পাল্টানোটা দেশের সার্বভৌমত্বের দিকে আঙুল তোলে না কি?
শুরু থেকে দেশের কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র সেনাপ্রধান বা রাষ্ট্রপতি দেখাচ্ছেন না? পদত্যাগপত্র প্রকাশ না করে রাষ্ট্রপতি কিভাবে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেন? তখন যে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি তা নতুন সংকটের উদ্ভব করেছে? রাষ্ট্রপতি বলছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র পাননি। তাহলে কোন নিয়মে আপনি অন্তঃবর্তীকালীন সরকারের শপথ করালেন? জাতির সাথে চরম তামাশা, পদে অধীনস্হ থাকাকালীন কে দিয়েছে আপনাকে?
পদত্যাগ পত্র যেমন পাওয়া যায়নি ঠিক তেমনি কোন ছুটিতে বা কোন কাজে হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী দেশ ত্যাগ করেছেন তার কোন লিখিত বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। তাহলে প্রশ্ন দাড়ায় একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে কিভাবে দুই মাস দেশের বাইরে রয়েছেন? ৫ আগস্টের পর সজীব ওয়াজেদ জয় গণমাধ্যমকে একবার তার মা পদত্যাগ করেছেন বলে জানান, পরমুহূর্তে আরেক গণমাধ্যমকে বলেছেন- মা পদত্যাগ করেনি, তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলে দাবি করেন। এমনকি মুজিব কন্যা শেখ হাসিনারও দাবি সেটা। তাহলে প্রধানমন্ত্রী সেদিন পরিস্থিতি মোকাবেলা না করে কেন ভারতে জরুরি অবতরণ করেন ও দীর্ঘসময় তাকে দেশে অনুপস্থিত থাকছেন? তা কতটুকু সাংবিধানিক ও আইনসম্মত? অন্তত ভারতীয় মিডিয়া এ যাবত তার অসুস্থতার খবরও প্রকাশ করেনি।
তাহলে তিনি কি 'পালিয়ে গেছেন' বলা যায় না? লক্ষ্মণ সেন যখন বাংলা থেকে পালিয়ে ছিলেন তখন বখতিয়ার খিলজী কার কাছে শপথ গ্রহণ করেছিলেন? যদি দেশ নতুন করে স্বাধীনই হয় তাহলে সেই পুরাতন রাষ্ট্রপতির কাছে অন্তঃবর্তীকালীন সরকারের শপথ নেয়াটাও অনেকটা বে-মানান নয় কি? ভূলের নৌকায় ছাত্রদের আন্দোলনে অর্জিত নব অভ্যুদয়, প্রাণের আহুতি সবই প্রশ্নবিদ্ধ ও সংকটময়।
তাহলে পরিত্রাণের উপায় কি? সংবিধানের ৭৷ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷
(২) জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে৷
আবার ৭(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।
সুতরাং সমাধান রয়েছে। জনগণের ক্ষমতায় কোন সরকারকে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংবিধানের এই অনুচ্ছেদগুলোই আমাদের পথ দেখায়।
লেখক: সাংবাদিক ও লেখক।