শাহ্ আলম শাহী,দিনাজপুর: রাস উৎসবের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে দিনাজপুরে প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর নিদর্শন কান্তজীউ মন্দির প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী রাসমেলা। রাস পূজা ও ঐতিহ্যবাহী চরক পূজার আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী সনাতন ধর্মীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তদের পূজা অর্চনা ও ধর্মীয় মেলা। ১৫ ই নভেম্বর তথা ৩০ শে কার্তিক (শুক্রবার) সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া এ মেলায় হাজার হাজার ভক্ত, পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে। দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে রাতভর মন্দিরের চারদিকে ভজন, কীর্তন আর ধর্মীয় সঙ্গীতের ধ্বনিতে অন্যরকম এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
আড়াইশ বছরের পুরোনো এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কান্তজীউ মন্দির এলাকায় দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্ত, পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর আগম ঘটেছে। ভারত থেকে আসা জয়ন্ত কুমার ও প্রমতি বালা দম্পতি এসেছেন এই রাস উৎসবে। গত তিন বছর পর তারা এসেছেন এই উৎবে। এনিয়ে ৫ বার তারা এলেন এই তীর্থ উৎসবে।
ষাটোর্ধ বয়সের জয়ন্ত কুমার জানালেন, এই উৎসবে অংশগ্রহন করতে পেতে ধর্মীয় পূর্ণতা লাভের পাশাপাশি মন থেকে আনন্দ উপভোগ করেন। তিন বছর আগে তিনি তার ভাই মোহন্ত কুমারসহ এসেছিলেন। এবারসহ দুই বার এলেন স্ত্রীসহ। উৎসবে অংশ গ্রহণের পাশাপাশি তারা আত্মীয় বাড়িতে বেড়িয়ে যাবেন। নওগাঁয় তাদের জ্যাঠা পরিবার আছেন। সেখানেও যাবেন।
ঢাকার দোহার থেকে এসেছেন, সুবীর চন্দ্র শীল।তার সাথে এসেছেন,আরো তিন জন। এবার নিয়ে তিনি দু'বার আসলেন। এর আগে এসেছিলেন করোনার আগে।
বগুড়া থেকে আসা প্রফুল্ল চন্দ্র প্রদীপ জানালেন,শুধু ধর্মীয় পূর্ণতা নয়,এ উৎসবে এসে অনেকের সাথে দেখা-স্বাক্ষাত হয়। ভারতী থেকে আসা অনেক আত্মীয়-স্বজনের সান্নিধ্য পাওয়স যায়। এতে প্রশান্তি মেলে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী রজনী,সুদীপ্ত, মেঘনা,সৌহান, সুস্মিতা এসেছেন উৎসবে। তারা একই সাথে পাঁচজন এসেছেন। দুই রাত থেকে ঘুরে বেরিয়ে আবার চলে যাবেন।বীরগঞ্জ উপজেলায় তাদের এক সহপাঠী বন্ধুর আমন্ত্রণে এসেছেন। এই উৎস তাদের খুবই ভালো লেগেছে বলে জানালেন।
যুগ যুগ ধরে এই ঐতিহাসিক কান্তজীউ মন্দিরে নির্দিষ্ট সময়ে পূর্ণিমার দিন থেকে মাসব্যাপী মেলা এবং উৎসব এই এলাকার সব ধর্মের মানুষের জীবনের সঙ্গে গেঁথে রয়েছে। মেলার মৌসুম এলেই এই এলাকার প্রত্যেক বাড়িতে আত্মীয়তা বেড়ে যায়। মেলা থেকে বছরে নিত্যপণ্য জিনিস ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।
মেলার আয়োজনে রয়েছে রাজ দোবোত্তর এস্টেট। দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রণজিৎ কুমার সিংহ জানান, প্রতি বছর রাস পূর্ণিমার রাতে রাধা-কৃষ্ণের রাস উৎসব উপলক্ষে কান্তজীউ মন্দির প্রাঙ্গণে বসে এই রাসমেলা। কান্তজীউ মন্দিরের রাসমেলা শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য প্রশাসনের সহায়তায় সার্বিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।
স্থানীয় মোয়াজ্জেম হোসেন,তোফাজ্জল হোসেন,মোকাররম,সুকুমার,প্রদীপ,সুমনসহ অনেকের অভিযোগ,এই ধর্মীয় পূর্ণভূমি কান্তজীউ মন্দিরে মেলার নামে একটি কুচক্রী মহল নোংরামি করে আসছে। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনে গোপনে গুটগুটি,ডাবু,তিনতাস সহ হরেক রকম জুয়ার আসর বসিয়েছে। এখন সার্কাস আর যাত্রার নামে অশ্লীল নৃত্য এবং লটারির নামে প্রতারণা ও জুয়ার জমজমাট আসরের আয়োজন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও মিডিয়া কর্মীদের ম্যানেজ করার অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। কিন্তু বিষয়টি জানতে পেরে সচেতন সূধীমহল এবং ছাত্র-জনতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তরুণ ও যুব সমাজকে নৈতিক অধ:পতন বাঁচাতে এধরনের আয়োজনের অনুমতি না দেওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন।