আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ● ৫ আশ্বিন ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যা: ছয় শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার       আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে বেরোবিতে ক্লাস শুরু       গাইবান্ধায় অপহরণের পর হাত-পা বাঁধা স্কুলছাত্র উদ্ধার       কুড়িগ্রামে ধরলা নদীতে গোসল করতে গিয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র নিখোঁজ       ড.মুহাম্মদ ইউনুসকে সম্মান দেয়নি, মামলা দিয়েছিল জেলে রাখার জন্য- মির্জা ফখরুল      

 width=
 

লিবিয়ায় লালমনিরহাটের দুই শ্রমিক অপহরণের শিকার

রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪, দুপুর ০১:২২

লালমনিরহাট প্রতিনিধি।। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই মুসলমান সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এরই মধ্যে  লিবিয়ায় অপহরণের শিকার লালমনিরহাটের দুই শ্রমিকের পরিবারে চলছে আতঙ্ক আর কান্নাকাটি। তাঁরা লালমনিরহাট জেলার বাসিন্দা। ধারদেনা ও জমি বিক্রি করে তিন বছর আগে লিবিয়ায় যাওয়া এসব শ্রমিকের দরিদ্র পরিবারের পক্ষে অপহরণকারীদের দাবি করা মুক্তিপণের টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। আবার মুক্তিপণের টাকা বাংলাদেশে থাকা অপহরণকারী চক্রের বিকাশ নম্বরে পর্যায়ক্রমে না দিলে ওই শ্রমিকদের হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অপহরণের শিকার ওই দুই শ্রমিক হলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে আল আমিন (২৩), জয়নাল আবেদিনের জামাতা হাফিজুল ইসলাম (৪০)।

শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিনে লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামে গেলে কথা হয় দরিদ্র কৃষক জয়নাল আবেদিনের (৬০) সাথে। সেখানে দেখা যায় তার একটি চারচালা ভাঙাচোরা টিনের ঘর। গত তিন বছর আগে জমিজমা ও সহায় সম্ভল সব  বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে একমাত্র ছেলে আল আমিনকে লিবিয়ায় পাঠান। তার ছেলের সাথে জামাতা হাফিজুল ইসলামও লিবিয়ায় যান। জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছরে কোনো সমস্যা না হলেও চলতি বছরের ১১ মার্চ সকাল ৮টায় অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তি তাঁর ইমো নম্বরে ফোন করেন। এ সময় জানানো হয়, তাঁর ছেলে আল আমিন ও জামাতা হাফিজুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তির জন্য এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। তা না হলে তাঁদের দুজনকে হত্যা করে লাশ গুম করা  হবে মর্মে হুমকি দেওয়া হয়।

জয়নাল আবেদিন বলেন, অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি ২টি বিকাশ নম্বর দিয়েছেন। দুইটি নম্বরে ৫০ হাজার করে মোট ১ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন।

ছেলে ও জামাতা অপহরণের শিকার হওয়ার কথা জানার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জয়নাল আবেদিনের স্ত্রী আলেয়া বেগম। দিন–রাত শুধু কান্নাকাটি আর সন্তান ও জামাতার জন্য দোয়া–দরুদ পাঠ করছেন।

অসুস্থ আলেয়া বেগম বলেন, তাঁর ছেলে ও জামাতা গ্রামের আবদুল মোন্নাফের ছেলে লিবিয়া প্রবাসী মিজানুর রহমানের মাধ্যমে লিবিয়ায় গেছেন। এই অপহরণের সঙ্গে মিজানুর জড়িত থাকতে পারেন বলে তিনি তার দিকে অভিযোগের তীর ছুরেন। মিজানুরের লোকেরা মুক্তিপণের জন্য নগদ টাকার লোভে তাঁর ছেলে ও মেয়ের জামাইকে লিবিয়ায় অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে তাঁর লোকদের দিয়ে মুক্তিপণের টাকা দাবী করছেন।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘ছেলে আর মেয়ের জামাই ঠিকমতো টাকাপয়সা কামাই করতে পারে নাই। এখন এই একলাখ টাকা কোন্টে থেকি দিমো? টাকা না দিলে ওমরা তো ছাওয়া ও জামাইক মারি ফেলাইয়া লাশও গুম করি ফেলাইবে।

অপহরনের শিকার জয়নাল আবেদিনের ছেলে ও জামাতার সাথে পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাটের ভীম শর্মা গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে আল আমিন (২২) এবং তাঁর খালাতো ভাই শাহিনুর ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৪) আছেন। তাঁরা লিবিয়ার বেনগাজিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।

সংবাদ পেয়ে সরেজমিনে লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামরাম গ্রামে সাংবাদিকরা গেলে লিবিয়ায় অপহরণের শিকার পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে ছুটে আসেন এবং তাদের ছেলে ও জামাতাকে উদ্ধারের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্বামী অপহরণের শিকার হওয়ার পর থেকে জয়নাল আবেদিনের মেয়ে জয়নব বেগম (৩৫) বাবার বাড়িতেই আছেন। পাশের রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি। শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁকে বলা হয়েছে, স্বামীকে অপহরণকারীদের কাছ থেকে ছাড়াতে না পারলে যেন স্বামীর বাড়িতে না ফেরেন।

জয়নাল আবেদিনের মেয়ে জয়নব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্বামী আমার একমাত্র ভাই আল আমিনের সঙ্গে লিবিয়ায় গেছেন। এখন সেখানে অপহরণের শিকার হওয়ায় আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন স্বামীকে খুঁজে বের করে দেশে আনতে বলেছেন। তা না হলে তাকে তার স্বামীর বাড়িতে ঢুকতে দিবেন না। তার দুইটা মেয়ে সন্তান আছে। স্বামীকে ফেরত না পেলে বুঝি তার সংসারটাই ভেঙ্গে যাবে বলে কাঁদতে থাকেন। তাদের ঈদের আনন্দ নাই। ভাই আর স্বামীকে ফেরত পেলেই আমরা শান্তি পাবো।

পঞ্চগ্রামের পাশেই রাজারহাটের ভীম শর্মা গ্রাম। এই গ্রামের আরেক আল আমিন দুই বছর আগে লিবিয়ায় কাজে যান। আল আমিনের বড় ভাই লিটন মিয়া (২৩) বলেন, ‘গত ১১ মার্চ সকাল আনুমানিক ৭টা ৫১ মিনিটে লিবিয়া থেকে আমার নম্বরে ফোন করে জানানো হয় যে আমার ভাই আল আমিন, খালাতো ভাই রাকিবুল, সিন্দুরিয়া গ্রামের আরেক আল আমিন, তাঁর ভগ্নিপতি হাফিজুলকে অপহরণ করা হয়েছে। তাঁদেরকে জীবিত পেতে চাইলে জনপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দিতে হবে। আর যদি আইনের আশ্রয় নেয়া হয় তাহলে তাঁদের হত্যা করে লাশ গুম করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।

এই অপহরনের পেছনে পঞ্চগ্রামের সিন্দুরিয়া গ্রামের আবদুল মোন্নাফের লিবিয়াপ্রবাসী ছেলে মিজানুর রহমান, একই ইউনিয়নের রামরাম গ্রামের সামসুল হকের ছেলে লিবিয়াপ্রবাসী মো. নাজমুল হুদা (২৩) এবং একই গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে লিবিয়াপ্রবাসী মো. সুলতান (৩২) কোনো না কোনোভাবে জড়িত রয়েছেন বলে লিটন মিয়াও অভিযোগ করেন। তিনি আজকেই (শনিবার) লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

একই সাথে জয়নাল আবেদিনও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান।

এদিকে পঞ্চগ্রামের সিন্দুরিয়া গ্রামের মৃত কাশেম আলীর ছেলে আবদুল মোন্নাফের সঙ্গে অভিযোগের ব্যাপারে কথা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁর লিবিয়াপ্রবাসী ছেলে মিজানুর রহমান একজন সৎ ও পরিশ্রমী যুবক। তাঁদের আর্থিক উন্নতির কারণে ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁরা এসব মিথ্যা কথা রটাচ্ছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনিও শুনেছেন, গ্রামের কয়েকজন লিবিয়ায় অপহরণের শিকার হয়েছেন।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানার উপপরিদর্শক ও পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের বিট অফিসার (এসআই) মো. রুহুল আমিন এর সাথে রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘লিবিয়ায় মুক্তিপণের জন্য শ্রমিকদের অপহরণের বিষয়ে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগের বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবহিত আছেন। ওসি স্যারের নির্দেশনার আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন


 

Link copied