শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ বিনা খরচে গাঁটছড়া বাঁধছেন ১২ দম্পতি
শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ বিনা খরচে গাঁটছড়া বাঁধছেন ১২ দম্পতি
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, রাত ১০:০৫
উত্তর বাংলা ডেস্ক : আর্থিক সংকট কিংবা সামর্থ্য না থাকায় যারা বিয়ে করতে পারছেন না তাদের জন্য ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রামের আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন। কন্যা দায়গ্রস্ত বাবা কিংবা আর্থিক সংকটে থাকা যুবকদের জন্য বিনা খরচে বিয়ের আয়োজন করতে যাচ্ছে তারা। ইতোমধ্যে তাদের ‘বিয়ে আপনার, খরচ আমাদের’ ক্যাম্পেইন বেশ আলোড়ন তুলেছে। সাড়াও মিলেছে বেশ।
তবে, যাচাই-বাছাই শেষে প্রথম ধাপে ১২ জন দম্পতিকে বাছাই করা হয়েছে। আগামী ১৮ জানুয়ারি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনা খরচে গাঁটছড়া বাঁধবেন তারা।
ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বিয়েতে বর বা কনেকে এক টাকাও খরচ করতে হবে না। বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব খরচ বহন করবে ফাউন্ডেশন। একই সঙ্গে ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় বর ও কনের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে বিয়ের পোশাক। কনের জন্য সাজসজ্জার যাবতীয় উপকরণের ব্যবস্থাও থাকছে। লাগবে না বিয়ের রেজিস্ট্রি খরচ। এ ছাড়া, কমিউনিটি সেন্টারে ১০০ জন অতিথির জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হচ্ছে। আর বিয়ের পর কক্সবাজারে ফ্রি হানিমুন প্যাকেজ পাবেন দম্পতিরা।
‘আলহাজ্ব শামসুল হক খান ফাউন্ডেশন’ একটি স্বেচ্ছাসেবী ও দাতব্য সংস্থা। সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের বিভিন্ন বিষয়ে এখান থেকে সহায়তা দেওয়াসহ সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বিয়ে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়গুলো প্রাধান্য দেওয়া হয়
শুধু এসব নয়, প্রয়োজনে বিয়ের পরও যে কোনো বিষয়ে এসব দম্পতি পাবেন কাউন্সিলিং সেবা। এর সঙ্গে প্রতি দম্পতির জন্য তোশক, বালিশ এবং নতুন সংসার শুরু করতে যে হাঁড়ি-পাতিল ও প্লেট-বাটির প্রয়োজন হয়, সেগুলোও দেওয়া হবে।
চট্টগ্রামের চান্দগাঁও খাজা রোডের গোলাম আলী নাজির পাড়ার আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের এমন উদ্যোগ সারা দেশে বেশ সাড়া ফেলেছে। আয়োজকরাও ভাবতে পারেননি এত বেশি পরিমাণ মানুষ এমন আয়োজনে আগ্রহী হবেন। সেজন্য দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় এমন বিনা খরচের বিয়ের কথা ভাবছেন তারা।
ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউর রহমান বলেন, ‘আলহাজ্ব শামসুল হক খান ফাউন্ডেশন একটি স্বেচ্ছাসেবী ও দাতব্য সংস্থা। সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের বিভিন্ন বিষয়ে এখান থেকে সহায়তা দেওয়াসহ সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বিয়ে, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়গুলো প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘বিনা খরচে বিয়ের ব্যবস্থার এই ক্যাম্পেইনে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। তবে, আমাদের সামর্থ্যেরও সীমা রয়েছে। সেজন্য ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের বাইরেও এমন আয়োজন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’
বিনা খরচের বিয়েতে দেওয়া হয়েছে দুই শর্ত
আলহাজ্ব শামসুল হক খান ফাউন্ডেশন প্রতি বছরই দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের ছেলে-মেয়েদের জন্য বিনা খরচে বিয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। তারা বলছেন, এটি একটি সামাজিক উদ্যোগ। যার মাধ্যমে সমাজের গরিব জনগণকে বিয়ের জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়। তবে, এক্ষেত্রে দুটি শর্ত দেওয়া হয়ে থাকে। যার একটি হচ্ছে, বিয়েতে কোনো যৌতুক নেওয়া যাবে না। অপরটি হচ্ছে, যে দেনমোহর ধার্য করা হবে সেটি সম্পূর্ণ আদায় করতে হবে।
বিয়েতে অংশ নিতে ৫৯৫ আবেদন, আসতে চান বিদেশিরাও
ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে ‘বিয়ে আপনার, খরচ আমাদের’— এমন আয়োজন করা হয়েছে। যার প্রথম পর্যায় চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নিতে গত ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা গেছে। দেশের সব জেলা থেকে অনেক মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সাড়া দিয়েছেন দেশের বাইরের মানুষজনও। ভারত, সৌদি আরব ও ইউকে থেকেও রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে ‘বিয়ে আপনার, খরচ আমাদের’— এমন আয়োজন করা হয়েছে। যার প্রথম পর্যায় চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নিতে গত ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা গেছে। দেশের সব জেলা থেকে অনেক মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সাড়া দিয়েছেন দেশের বাইরের মানুষজনও। সবমিলিয়ে জমা পড়েছে ৫৯৫টি আবেদন। সেজন্য জানুয়ারি মাসেই দেশের অন্য বিভাগে দ্বিতীয় পর্যায়ের বিয়ের আয়োজন করা হবে
সবমিলিয়ে জমা পড়েছে ৫৯৫টি আবেদন। সেজন্য জানুয়ারি মাসেই দেশের অন্য বিভাগে দ্বিতীয় পর্যায়ের বিয়ের আয়োজন করা হবে।
ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বিনা খরচে বিয়ের আয়োজন
‘ভবিষ্যতেও বিয়ের এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে’ বলে জানিয়েছেন আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটি বাংলাদেশে একটি অলাভজনক দাতব্য সংস্থা। আমরা ২০১৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও সাতক্ষীরাসহ সব জেলায় দরিদ্র, দুস্থ ও অভাবী মানুষের সেবা দিয়ে আসছি। ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা হলেও সবসময় আমরা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।’
‘মাঠকর্মী হিসেবে আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরেছি। সেখানে আমি দেখেছি, যৌতুক একটি মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। একজন বাবা তার আদরের মেয়েকে ছোটবেলা থেকে লালনপালন করেন। কিন্তু সেই মেয়ের বিয়ের সময় তাকে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। কারণ, মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিতে হবে, বরপক্ষকে খাওয়াতে হয়। যা সম্পূর্ণভাবে একটি অমানবিক বিষয়। এসব লোকদেখানো রীতিনীতি আমাদের সমাজে বিয়েকে কঠিন করে দিয়েছে। আবার ছেলেরাও অনেক সময় বাড়তি মোহরানার চাপে বিয়ে করতে পারেন না। আমরা এই যৌতুক প্রথাকে সমূলে বিনাশ করতে চাই। একই সঙ্গে লোকদেখানো মোহরানা ও বাড়তি খরচ কমিয়ে বিয়েকে সুন্নাহ অনুযায়ী বরকতপূর্ণ করতে চাই। সেজন্য এমন আয়োজন করা হয়েছে।’
মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দরিদ্র পরিবারের আর্থিক চাপ কমাতে চাই। একই সঙ্গে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র বন্ধন তৈরি করে সমাজে শান্তি, ভালোবাসা ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে চাই।’
এবারের আয়োজন গতবারের চেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে— জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এর আগের আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২১ সালে। সেই সময় কয়েকজন বর-কনে পেতে আমাদের বেশ কষ্ট করতে হয়। তবে, এ বছর আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। ৫৯৫টি আবেদন পেয়েছি। তারা সবাই যৌতুকবিরোধী এবং মোহরানা আদায়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভারত থেকেও আমরা তিনটি আবেদন পেয়েছি। এ ছাড়া সৌদি আরব, ইংল্যান্ড থেকেও আবেদন পেয়েছি।’
ভবিষ্যতেও এমন কার্যক্রম দেশের বিভিন্ন জেলায় অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।