সুবর্ণা আক্তার
সংবিধান হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন যেটির মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয়। বিশেষ করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধানকে সমগ্র রাষ্ট্রের দর্পণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় যেখানে সাধারণ মানুষের সকল চাহিদা ও অধিকারের প্রতিফলন থাকবে।
কিন্তু বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও সংবিধানে জনগণের চাহিদাগুলা কখনোই যথাযথ প্রতিফলন ঘটে নি। এমনকি দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকার নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সংবিধান সংস্কারের নাম করে পরিবর্ধন পরিমার্জন করে গেছে জনগণের অধিকারকে খর্ব করে। এভাবে ১৭ বার বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধিত করা হয়েছে।
জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর পুনরায় সংবিধান সংস্কার নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। কেউ বলছে সংবিধান আবারও সংস্কার করতে আবার কেউ বলছে নতুন করে সংবিধান লিখতে। যাতে স্বৈরাচারের পথ রুদ্ধ করা যায়। সেই সঙ্গে সংবিধানের যে কয়েকটি ধারা দেশ ও জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী তা বাদ দেওয়া।
এতকিছুর পরেও প্রশ্ন থেকেই যায় ১৭ বার সংবিধান সংশোধন করেও যেখানে স্বৈরাচার রোধ কিংবা বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি সেখানে নতুন করে সংস্কার করলে বা নতুন করে লিখলে তা আদোও কী ফলপ্রসূ হবে!
এই ফলপ্রসূ না হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের যথাযথ সংস্কার করতে পারে নি।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় বাংলাদেশের সৃষ্টি লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক প্রতিহিংসা পরায়ণ, স্বজনপ্রীতি দূর্নীতি পরায়ণ মনোভাব বিদ্যমান। যেটা তারা তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে বারবার প্রমাণ করেছে। দিনশেষে যে দলই ক্ষমতায় আসুক দেশের স্বার্থের চেয়ে তারা সবসময় দলীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে গেছে। যার ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও রাজনৈতিক নেত্রীবর্গের ভাগ্য ব্যতীত দেশ ও সাধারণত মানুষের ভাগ্যে এতটুকুও পরিবর্তন হয় নি।
সেজন্য সংবিধান সংস্কারের দিকে মনোযোগ দেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নিজেদের সংস্কার করা। তাদের উচিত হবে যোগ্য ন্যাপরায়ণ, সৎ দেশপ্রেমিক নেতাকর্মী বাছাই করে দলীয় কাজে অন্তর্ভুক্ত করা যারা পরবর্তীতে দেশকে আস্থাশীল জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। এছাড়া প্রতিহিংসাপরায়ণতা বাদ দিয়ে গঠনমূলক রাজনীতির দিকে মনোনিবেশ করা। অন্যথায় সংবিধান সংস্কার বা পুনর্লিখন করেও কোনো লাভ হবে না।
গ্রিক দার্শনিক প্লেটো বলেছেন যদি শাসক ন্যায়বান হয় তাহলে আইনের দরকার নেই, কিন্তু শাসক যদি দূর্নীতিপরায়ণ হয় তাহলে সেখানে আইন নিরর্থক। বাংলাদেশ অর্থে তাই বলা যায় যদি রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনমূলক সংস্কারিত হয় তাহলে সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজন নেই কিন্তু তারা যদি সংস্কার না হয় তাহলে সংবিধান সংস্কার বা পুনর্লিখন নিরর্থক।
কারণ দিনশেষে এইসব রাজনৈতিক দলগুলোই পরবর্তীতে রাষ্ট্র পরিচলনা করবে সংবিধানের মাধ্যমে। তাই সংবিধান সংস্কারের পাশাপাশি তাদের দলীয় সংস্কারও একান্ত প্রয়োজন।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।