ডেস্ক: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়া শেখ হাসিনার আরেকটি ‘ফোনালাপের অডিও’ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। রবিবার (২৭ অক্টোবর) রাত থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে।
নতুন এই ফোনালাপের অন্য প্রান্তের কণ্ঠটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুলের দাবি করা হচ্ছে। তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন তা জানা যায়নি।
অভিযোগ আছে, শাকিল আলম বুলবুল ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন সন্ত্রাসী। হত্যা গুম খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে ‘পারদর্শী’ হওয়ায় সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ তাকে সহজেই কাছে টেনে নেন। তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানান। চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি ধর্মীয় কাজের নামে সরকারি বরাদ্দ করা চাল আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের মামলায় আসামি হন।
আবুল কালাম আজাদ ও সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধানের নেতৃত্বে উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৬ সালে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লিতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে তিন সাঁওতাল বাসিন্দাকে হত্যা করেন শাকিল আলম বুলবুল। সাঁওতাল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ৯০ নম্বর আসামিও শাকিল আলম বুলবুল।
তবে এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল বলেন, ফাঁস হওয়া ফোনালাপটি শাকিল আলম বুলবুলের কিনা তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। বুলবুলসহ সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ এখনও আত্মগোপনে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। তাদের আটক করার জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
ফোনালাপে কী বলেছেন-
ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এখন বেশি বাড়াবাড়ি করছে, দেখ- ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই শত্রুরা টিকে কিনা। কাউকে পালাতেও দেওয়া হবে না।’ এ সময় অন্য প্রান্ত থেকে (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) বলেন, জি নেত্রী, আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কথায় আমরা ভরসা রাখছি। শেখ হাসিনা বলেন, একদম একদম। তখন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আপনি একটু মাথা ঠান্ডা রেখে আপনার কৌশলে এগিয়ে যান নেত্রী। তবে সবাইকে সব কাজ বরাদ্দ রেখে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঠিক আছে, আমি সবাইকে বলছি, তোমরা শুধু দুই মাস অপেক্ষা করো। কিছু বলো না। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি নেত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ওরা ফেল করবে, আর আমরা যদি কিছু করি, তখন বলবে আমাদের জন্য করতে পারে নাই। সেটা আর বলার মুখ নেই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও ইউনূসের গুটি গুটি চেহারা...। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি নেত্রী অলরেডি বাংলার মানুষ বুঝে গেছে। মানুষ ভয়েই কেউ মুখ খুলতে পারছে না।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এখন ওদের ভয় দিতে হবে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি নেত্রী, ওই যে আমাদের গোবিন্দগঞ্জের কালাম ভাই এমপি আর আমি উপজেলার চেয়ারম্যান বর্তমান ছিলাম নেত্রী, আর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরপর ছিলাম দুবার, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। ওনার বাড়ি-গাড়ি সব জ্বালিয়ে দিছে। আমারও বাড়ি গাড়ি পুড়িয়ে দিছে নেত্রী। আমাদের অসংখ্য মামলা দিয়েছে, আপনি শুধু আমাদের জন্য দোয়া রাখবেন। শেখ হাসিনা বলেন, না আমি একটা কথা বলি, তোমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিছে কে? সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ওরাই নেত্রী, জামায়াত-বিএনপি সকলই। শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ঘরবাড়ি নেই?
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি আছে। শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে সবকিছু কি প্রকাশ্যে করতে হয়। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি না, না নেত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, তোমাদের নাই, তাহলে কারও ঘরবাড়ি থাকবে না।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, একটা সংশয় নেত্রী, গোবিন্দগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সেক্রেটারি, তাদের নামে একটি মামলাও হয়নি। কিংবা তাদের বাড়িঘরেও ওরা যায়নি। ওরা কীভাবে টিকলো? শেখ হাসিনা বলেন, শোনো ওরা দেখে যেগুলো পটেনশিয়াল, যেগুলো দেখে একেবারেই শক্ত, তাদের ওরা তালিকা করে। সবাইকে কাউন্ট করে না। সেই জন্য বললাম, যাদের বাড়িঘর পোড়া গেছে, তাদের হিসাব নেওয়া হচ্ছে, কারা পোড়াতে আসছিল, আর আমার বাড়ি যদি পুড়ে তাদেরও পুড়বে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি নেত্রী, জি নেত্রী আলহামদুলিল্লাহ। আপনার সঙ্গে কথা বলে বুকটা ভরে গেলো নেত্রী। আপনি ভালো থাকবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মামলা, আমার তো শুধু গোবিন্দগঞ্জ না, সারা দেশে ২২৭টি মার্ডার কেস। আমি বলছি, সবাই তালিকা করো। তোমরাও তালিকা করো। ২২৭ মার্ডারের লাইসেন্স পেয়ে গেছি। এক মামলায় যে শাস্তি, সোয়া ২০০ মামলায় একই শাস্তি। তাই না। ঠিক আছে সেই শাস্তি নেবো। তার আগে সোয়া ২০০ হিসাব করে নেবো। এটা যেন মাথায় থাকে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ইনশাআল্লাহ, ইনশাআল্লাহ। শেখ হাসিনা বলেন, এবার একবার আসতে পারলে কেউ ফেলাইতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।