স্টাফ রির্পোটার,নীলফামারী॥ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মাত্র ১২০ টাকা আবেদন ফি দিয়েই নীলফামারীতে পুলিশে চাকরি পেয়েছেন ৬৯ নারী-পুরুষ। রবিবার(১৯ মার্চ) রাতে পুলিশ লাইন্সে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি প্রার্থীদের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সোমবার(২০ মার্চ) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিতদের রজনী গন্ধা ও মিষ্টি খাইয়ে অভিনন্দন জানান পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় পুলিশে চাকুরি পাওয়ারা তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর দক্ষিন খড়িবাড়ি গ্রামের শাহ আলম কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলছিল আমি যখন ৫ বছরের শিশু, ঠিক তখন বাবা বাহার আলী আমার মা শাহেলা বেগম সহ আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত আমাদের তিনি খোঁজ নেননি। আমার মা মিল চাতাল সহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকের কাজ করে আমাকে এইচএসসি পাস করিয়েছেন। ছোট বেলা থেকে পুলিশে চাকুরি করার মনবাসনা ছিল। অনলাইনে ১২০ টাকা খরচ করে পুলিশে চাকুরি আবেদন করি। নীলফামারীতে পুলিশ লাইন্সে দাঁড়িয়েছিলাম। পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার ঘোষণা শোনে আনন্দে কেঁদে ফেলেছি।
জেলা সদরের হাড়োয়া গ্রামের বৈশাখী দাস। এইচএসসি পাস করেছেন। বাবা বিনয় দাস একজন শারিরিক প্রতিবন্ধি। মা সাগরিকা দাস ইপিজেডে শ্রমিকের কাজ করেন। একজন অভিভাবক হিসাবে বৈশাখী দাসের মা বলছিলেন শ্রমিকের কাজ নিতে আমাকে দালালের কাছে ঘুষ দিতে হয়েছিল। কষ্ট করে মেয়ের লিখাপড়া শিখিয়েছি। আজ মাত্র ১২০ টাকায় আবেদন করে আমার মেয়ে যোগ্যতা অর্জন করে পুলিশে চাকুরি পেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তারা ঘুষ ছাড়া যে চাকুরি দেয় সেটি আবার প্রমানিত হলো। এ জন্য তিনি খুশীতে আতœহারা।
পুলিশ সদস্য পদে চাকুরির নির্বাচিতদের আরও অনেকে আছেন কৃষক, ভ্যান চালকের সন্তান, রাজমিস্ত্রীর সহকারীর সন্তান, দিনমজুরের সন্তান। তারাও তাদের দুঃখ কষ্টের কথা তুলে ধরেন বলে ১২০ টাকা খরচ করে আবেদনের মাধ্যমে মেধা ও যোগ্যতায় পুলিশে চাকুরি পেয়েছি।
অনেকের বাবা মারা যাওয়ায় বড় ভাইয়ের সাথে দিনমজুরি করে এইচএসসি পাশ করে মেধা ও যোগ্যতায় পুলিশের চাকুরি পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, কনস্টেবল পদে জেলায় ২ হাজার ৪১৫ জন চাকরি প্রত্যাশী আবেদন করেন। শারীরিক পরীা-নিরীার পর লিখিত পরীায় অংশ নেয় ৪৪২ জন। এরপর মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১৭৯ জন উত্তীর্ণ। মৌখিক পরীক্ষায় তাদের মধ্যে সাধারন কোঠায় পুরুষ ৪২ জন, নারী ৮ জন, বীরমুক্তিযোদ্ধা কোঠায় পুরুষ ১০ জন নারী ১ জন, পুলিশ পোষ্য কোঠায় পুরুষ ৬ জন ও নারী ১ জন । আনসার কোঠায় পুরুষ ১ জন। এতে পুরুষ ৫৯ জন ও নারী ১০ সহ ৬৯ জন নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আবেদনকারীদের ঘুষ কিংবা দালালদের মাধ্যমে চাকরির সুযোগ দেওয়া হয়নি। কোনো ধরনের তদবির ছাড়াই শুধু মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ১০ জন নারী ও ৫৯ জন পরুষকে কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।