ডেস্ক: সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকালে তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক আবু আনছার৷ অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার জামিন আবেদন করেন।
দুপুর ২টার দিকে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানি হবে। শামসুজ্জামান শামসের আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার এ তথ্য জানান৷
এদিন তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। সকাল ১০টার দিকে তাকে আদালতে আনা হয়। শামসুজ্জামানকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে।
বুধবার ভোররাত চারটার দিকে সিআইডির পরিচয়ে শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যায় সিআইডি। বুধবার দিনভর নাটকীয়তার পর বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগে, বুধবার ভোররাতে গোলাম কিবরিয়া নামে এক ব্যক্তি তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় শামসের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(২)/২৬(২)/২৯(১)/৩১(২)/৩৫(২) ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলো একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে। প্রথম আলো পত্রিকা অফিস থেকে সংবাদটি শেয়ার করা হয়। সংবাদে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি শিশুটির নাম জাকির হোসেন।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে, পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়ে কি করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।
এরপর বুধবার রাতে একই অভিযোগে রমনা থানায় আরেকটি মামলা করেন আইনজীবী মশিউর মালেক। মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, শামসুজ্জামান শামস ও অজ্ঞাতনামা ক্যামেরাম্যানকে আসামি করা হয়।
সামাজিক মাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। সংবাদটি দেশ বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সোনালী গৌরবউজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণসহ বহিঃবিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতা দিবসের দিনে এই সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বধীনতা অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
পরবর্তীতে ৭১ টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্বৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। শিশুটির বিষয়ে ভুল তথ্য, নাম পরিচয়ও ভুল দেওয়া হয়েছে। পরে শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশুর হাতে ১০ টাকা দিয়ে এ ছবি তুলেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এমন সংবাদ করেছে প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদক।