স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা কর্তৃক স্থানীয় সরকারের তৃণমুলের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙ্গে না দেয়ার দাবীতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরাম ও বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সংস্থা। মঙ্গলবার(১৫ অক্টোবর) নীলফামারীর সদর, কিশোরীগঞ্জ ও জলঢাকা উপজেলায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস বরাবর স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধ্যম স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল হক, কিশোরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী হক ও জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি.আর. সারোয়ার স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের চৌরঙ্গি মোড়ে ঘন্টাব্যাপী এই কর্মসুচিতে জেলা সদরের ১৫টি ইউনিয়নের সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড সদস্যবৃন্দ অংশ নেন। আয়োজক সংগঠনের নীলফামারী সদর উপজেলা আহবায়ক নুর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্য সচিব ও খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের নুর হোসেন, কচুকাটা ইউনিয়নের আব্দুল হাই, চাপড়া সরমজানী ইউনিয়নের আব্দুল্লাহ, রামনগর ইউনিয়নের রশিদুল ইসলাম, রামনগর ইউনিয়নের মনোয়ারা বেগম ও ইটাখোলা ইউনিয়নের মমতা বেগম প্রমুখ।
অন্যদিকে একই সময় জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলার প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরাম। মানববন্ধনের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। মানববন্ধন চলাকালিন বক্তব্য রাখেন- বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলার রহমান, কিশোরীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী , বাহাগিলী ইউপি চেয়ারম্যান সুজাউদ্দৌলা লিপ্টন, ইউপি সদস্য সাফিউল ইসলাম, ইউপি সদস্য রোজিনা প্রমুখ।
এদিকে একইসময় জলঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে গুলমুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন শৌলমারি ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান, মীরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা মানিক, ইউপি সদস্য মনোয়ার হোসেন, মশিউর রহমান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোর্সেদা বেগম, রাহেনা বেগম সহ ইউপি সদস্য প্রমুখ।
এসময় সদরের মানববন্ধনে বক্তারা উল্লেখ করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা দলীয় প্রার্থী ছিলেন না এমনকি দলীয় প্রতিকও ছিলো না। তৃণমুলের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙ্গে দিলে সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষ। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবী জানাবো বর্তমান পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত যেন ভেঙ্গে বা বিলুপ্ত করা না হয়। বক্তারা আরো বলেন, বর্তমান পরিষদের মেয়াদ প্রায় ৩বছর হয়েছে আর বাকি রয়েছে ২বছর। বাকি সময়টুকু আমরা শেষ করতে চাই। মাঝপথে বিলুপ্ত করা হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো।
অন্যদিকে কিশোরীগঞ্জ ও জলঢাকার মানববন্ধনে বক্তারা জানান, আমরা দিন রাত পরিশ্রম করে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ জনপদের আইন শৃংখলা রক্ষাসহ জনসেবা করে আসছি। জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক-চারিত্রিক সনদ, গ্রাম আদালত পরিচালনা করে মামলা মোকদ্দমা নিষ্পত্তিকরণসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন রকম সেবা দিয়ে আসছি। এছাড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে উন্নয়ন করার ফলে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ জনগণের আশা ও ভরসার আশ্রয় স্থলে পরিণত হয়েছে। ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। ৫ আগষ্টের পরবর্তীতে বিশৃংখলা ও আইন শৃংখলা পরিস্থিতি আমরা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও চেয়ারম্যানরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দিন রাত পরিশ্রম করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের উচ্চ মহলে এখনও স্বৈরাচার সরকারের প্রেতাত্মারা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তারা ভুল পরামর্শ দিয়ে জনপ্রিয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকারের উপদেষ্টাকে প্রাচীন জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানটি ভেঙ্গে দেয়ার কু-পরামর্শ দিচ্ছেন।