নিউজ ডেস্ক: স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে যতটুকু অ্যাক্টিভ দেখতে চেয়েছিলেন, তেমনটা পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সবচেয়ে সক্রিয় হওয়ার দরকার ছিল। যিনি অফিস মন্ত্রণালয়ে না করে হাসপাতালে করবেন, প্রত্যেকটা হাসপাতালে দৌড়াবেন। কিন্তু আমরা যেমন অ্যাক্টিভ দেখতে চাই, তেমনটা পাই না।’
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) গণ-অভ্যুত্থানে আহত রোগীর চিকিৎসা কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের যে জিনিসগুলো সেবার জন্য দেওয়া হয়, এই জিনিসগুলোর মধ্যে যেখানে বেডপ্যাক দেওয়ার কথা সেখানে পেপার দেওয়া হয়েছে। যে জায়গায়গুলো লেগেছে সেই জায়গায় পেপার দেওয়া মানে তো সেখানে ইনফেকশন করবে। পেপার তো একটা ময়লা জিনিস, এই পেপার তো দোকান থেকে কেজি দরে কিনে নিয়ে আসা পেপার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটা অভিযোগ এসেছে এখানকার পরিবেশ। এখানে নতুন বিল্ডিং আছে সেখানকার পরিবেশ ভালো। কিন্তু আজ থেকে কয়েক বছর আগে কিছু রুম পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেই রুমগুলোতে রোগী রাখা হয়েছে। এখন তারা যদি বলে এখানে রোগীর আধিক্য বেড়েছে বলে পরিত্যক্ত রুমে রাখা হবে, যেগুলো গোডাউনের চেয়ে খারাপ। সেটা তো কোনোদিন যৌক্তিক হতে পারে না। যে রুমগুলো দুইজনের, যেগুলো ভালো রয়েছে সেখানে আরেকটা বেডপ্যাক আপনি লাগান। সেটা না করে তারা পরিত্যক্ত রুমগুলোতে রেখেছে। রোগী ভালো হওয়ার জন্য ভালো পরিবেশ দরকার। সেই পরিবেশ যদি নরমাল পরিবেশের চেয়ে খারাপ হয়, তা হলে রোগী তো ভালো হওয়ার চেয়ে খারাপের দিকে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আসছি এই খবর শুনে দৌড়াদৌড়ি করে ফ্লোর মোছা হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় স্যাভলন দেওয়া হচ্ছে, ক্লিন করা হচ্ছে। এগুলো তো এক-দুই দিনের জন্য আমাদের দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা তো প্রতিদিন আসব না। এটা করতে হবে ৩৬৫ দিনের জন্য। এই রোগীগুলো তো কারও কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। আমার মাথায় এটা ঢোকে না এই জিনিসগুলো যারা করে তাদের কি পরিবার নেই? তারা কি তাদের পরিবারের সদস্য নিয়ে অন্য হসপিটালে যায় না? তারা দেখে না যারা হসপিটালে যায় তারা অসহায় অবস্থায় যায়। তাদের জিম্মি করে এই রকম ব্যবহার করার তো কোনো মানে হয় না। বিশেষ করে স্টাফদের, যারা রুট পর্যায়ে কাজ করে তাদের ব্যবহার একেবারে খারাপ। এই কথাটা রোগীদের পক্ষ থেকে এসেছে তাদের ব্যবহার খারাপ।’
সারজিস বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, রোগী ভালো ব্যবহারে অনেকটা ভালো হয়ে যায়। তারা যদি এই জায়গাটার দায়বদ্ধতা না বোঝে, তাদের কাজ কী, এই কথাটা যদি না বোঝে তা হলে তো তাদের কাজ করার কোনো প্রয়োজন নেই। একটা রোগীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার মানসিকতা যদি না থাকে, তা হলে এখানে চাকরি করার তো কোনো দরকার নেই। আপনারা অন্য চাকরি করেন।’
খাবারের বিষয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘যেদিন খাবারের অভিযোগ দেওয়া হয় ওইদিন কিংবা ওই বেলা ভালো খাবার দেওয়া হয়, তার পর আবার আগের মতোই। আপনি একটা হসপিটালে খাবারের বিজনেস করছেন, আপনারা লাভ করবেন সমস্যা নেই, কিন্তু এই লাভটা যদি চুরির পর্যায়ে চলে যায়, আপনি যদি তিন বেলা খাবারের বিষয়ে জিম্মি করেন রোগীদের তা হলে তো সমস্যা। যে খাবার দেওয়া হচ্ছে ওই মানের খাবার খাওয়া যায় না। অনেকে অভিযোগ করেছেন তাদের বাইর থেকে খাবার কিনে আনতে হয়। আবার বাইর থেকে খাবার ভেতরে নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। যারা আন্দোলনে আহত হয়েছেন তারাই এসব অভিযোগ করেছেন। এটা বড় একটা সমস্যা, এই দায় এখানকার ম্যানেজমেন্টকে অবশ্যই নিতে হবে। এখানে খাবার নিয়ে হোক, সেবা নিয়ে হোক, স্টাফদের সিন্ডিকেট হোক এসব তো ম্যানেজমেন্ট বা প্রশাসনকে কন্ট্রোল করতে হবে। না পারলে যে পারবে তাকেই এখানে বসাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু সিআরপি নয়, বাংলাদেশের যেকোনো হসপিটালেই যেদিন কেউ পরিদর্শনে আসবে সেদিন ধুয়ে-মুছে চকচকে করা হয়। আমরা তো মাত্র ৩০ মিনিটের নোটিশে এসেছি, আমাদের সামনেও তারা ধোয়ামোছা শুরু করেছে। যা আমাদের চোখে পড়েছে। আমরা আসবো এ জন্য এটা করা হবে তা উচিত নয়। এটা সব সময় করা উচিত।’
সারজিস বলেন, ‘আমাদের কাছে আরও বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে যে, রোগীদের যে প্রত্যাশা একদিন কিংবা দুই দিন পর হোক ডাক্তার রোগীদের গিয়ে দেখে আসবেন। সেই জায়গায় ১৫ দিনে একজন ডাক্তারের সাথে তারা কথা বলতে পেরেছে। এখানে বেশিরভাগ রোগী প্যারালাইসজড, হাতে সেন্স নাই, পায়ের সেন্স নাই। সেই রোগীকে কেন ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখাতে হবে। ডাক্তার বেডে বেডে এসে রোগীদের দেখবে না? আমরা তো হাসপাতালে হাসপাতালে এটাই দেখি। কিন্তু এখানে রোগীদেরই ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখাতে হয়। আমাদের কাছে কয়েকটা পেশার মানুষের জন্য শ্রদ্ধার জায়গাটা অনেক ওপরে। এর মধ্যে শিক্ষক ও ডাক্তার আছেন। তাদের জায়গায় এমনটা দেখলে আমাদের নিজেদের মর্মাহত করে।’
‘মেডিসিনের জন্য স্টাফদের কাছে গিয়ে বারবার বলতে হয়। এ বিষয়ে কথা বললে তারা খারাপ আচরণ করেন। একবারে গিয়ে কখনও মেডিসিন পায় না। এই রকম সেনসেটিভ জায়গাগুলোতে এমনটা আমরা প্রত্যাশা করি না। সেটা আন্দোলনকারী হোক কিংবা সাধারণ রোগী। এটা তো আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নাই। আন্দোলনকারী বলে চিকিৎসা এক রকম হবে আর সাধারণ রোগী বলে চিকিৎসা আলাদা হবে এটা প্রত্যাশা করি না। কারণ এই আন্দোলনকারী ভাই-বোনরাই এক সময় সাধারণ হয়ে আসবেন।’
এই অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কি ধরনের পদক্ষেপ নেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের হেলথ টিম এখানে আসবে৷ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রশাসনের সাথে কথা বলব। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সিআরপি যারা বাংলাদেশের দায়িত্বে আছেন তাদের সাথে আমরা কথা বলব। সিআরপি ঢাকারটার পরিবেশ খুবই ভালো। সব সুযোগ-সুবিধা খুবই ভালো। এটা ঢাকার থেকে একটু বাইরে, লোকজন কম আসে, মিডিয়ার ফোকাস কম, এ জন্য যেমন ইচ্ছে তেমন করবে এটা হতে পারে না।’