স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ হাতের মেহেদী এখনও শুকিয়ে যায় নি নববধু জ্যোসনা খাতুন(১৫) এর। কে জানতো বিয়ের মাত্র ১৯ দিনের মাথায় লাশ হতে হবে তাকে।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে অজ্ঞাত হিসাবে জ্যোসনার মরদেহ তিস্তা নদীতে ভাসমান অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করেছিল লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চৌরাহা মাদরাসা এলাকায়। পুলিশ জানায় মরদেহে মেয়েটির হাত মেহেদি রাঙানো এবং লেখা আছে ‘আই লাভ ইউ’। দুই হাত পেছন দিকে ওড়না দিয়ে বাঁধা এবং কালো রঙের বোরখা পড়া ছিল। এমন কি মুখমন্ডল অ্যাসিড দিয়ে ঝলসানো ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ঘাতকরা তাকে মেরে হাত বেঁধে মুখ অ্যাসিডে ঝলসে ঢেলে দেয়।
এঘটনায় মেয়েটির চাচা সহর আলী বাদী হয়ে সোমবার(২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে নীলফামারীর ডিমলা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
নববধু জ্যোসনা খাতুন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ি গ্রামের কৃষক জহর আলীর মেয়ে।
সুত্র মতে, আগামী বছর জ্যোসনার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। সে গ্রামের টেপাখড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কিন্তু বখাটেদের উৎপাদে বাবা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন।
এদিকে সোমবার লালমনিরহাট জেলার মর্গে লাশের ময়না তদন্ত শেষে বিকালে পরিবারের হাতে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষে লালমনিরহাটের আদিমারী থানায় একটি জিডি করা হয় বলে জানান, আদিতমারী থানা ওসি মাহমুদ উন নবী। তিনি জানান, লাশ উদ্ধারের দিন সন্ধ্যায় মেয়েটি পরিবারের সদস্যরা এসে লাশ ও পরিচয় শনাক্ত করেন।
এদিকে সোমবার নীলফামারীর ডিমলা থানার পুলিশ তিস্তা নদীর এলাকায় চিরুনী অভিযান চালিয়েও চিহিৃত করতে পারেনি হত্যাকারী ঘাতকদের। তবে হত্যার শিকার জ্যোসনার মোবাইল নম্বর দিয়ে ঘাতকদের চিহিৃত করার কৌশল চালাচ্ছে পুলিশ। তিস্তা এলাকায় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পুলিশ ফোর্স সহ অবস্থান করছিলেন নীলফামারীর ডোমার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আলী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও ডিমলা থানার ওসি দেবাশীষ কুমার রায়।
ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, জ্যোসনার সাথে ১৯ দিন আগে বিয়ে হয় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছচাঁপানী ইউনিয়নের ছাতুনামা সোনাখুলী গ্রামের মোহম্মদ আলীর ছেলে জাহিদ মিয়ার (২০)। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) জ্যোসনার চাচাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে সে স্বামী সহ বাবার বাড়ি এসেছিল। দুপুরে বিয়ের দাওয়াত খায় জ্যোসনা ও তার স্বামী। এরপর স্বামী সহ বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিল। বিকালের পর সে বর যাত্রী আসার আগেই স্বামীকে বাবার বাড়িতে রেখে পুনরায় চাচাতো বোনের বাড়ির দিকে একাই রওনা দেয়। এরপর থেকেই জ্যোসনা নিখোঁজ হয়। এ সময় তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। ধারনা করা হচ্ছে কোন বখাটে যুবকরা মেয়েটিকে অপহরণ করে হত্যা করে তিস্তা নদীতে ফেলে দেয়। ফলে নিখোঁজের দুইদিনের মাথায় লাশ উদ্ধার হয়।
এদিকে বিভিন্ন সুত্র জানায় বিয়ের আগে জ্যোসনাকে বেশ কিছু বখাটে স্কুল যাওয়া আসার সময় ইফটিজিং করতো। অপর দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে বয়ফেন্ডের সাথে পালাতে গিয়ে হত্যার শিকার জ্যোসনা।
ডিমলা থানার ওসি দেবাশীষ কুমার রায় জানান, এ ঘটনায় মেয়েটির চাচা সহর আলী রবিবার রাতে ডিমলা থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের পক্ষে আসামীদের চিহিৃত করার জন্য তিস্তা এলাকায় জোড়দার অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন দ্রুতই আমরা হত্যাকারীদের চিহিৃত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।