আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৪ ● ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২৪
 
 width=
 
 
 width=
 
শিরোনাম: নাসির উদ্দীনকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন গঠন       আমরা কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে না- জাপা কো চেয়ারম্যান মোস্তফা       স্বামীর যে তিনটি আচরণে দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যায়       পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামলো ১৪ ডিগ্রিতে       বেরোবিতে ”ক্লিন ক্যাম্পাস, গ্রিন ক্যাম্পাস” ইভেন্ট অনুষ্ঠিত       

 

২৭ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব পর্যটন দিবস - ২০২৪: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, দুপুর ০২:০৭

শেখ মাজেদুল হক 

প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর, বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয় -বিশ্ব পর্যটন দিবস, যা পর্যটনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে। ২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য “পর্যটন আমাদের একত্রিত করে, শান্তির পথের সেতু গড়ে”। এই প্রতিপাদ্য শুধু বৈশ্বিক নয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক, কারণ পর্যটন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাংলাদেশের পর্যটনের বর্তমান অবস্থা : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্য বিশ্ব পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মনোমুগ্ধকর পাহাড়, সিলেটের সবুজ চা বাগান—এসব স্থান বাংলাদেশকে এক অনন্য পর্যটন গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরেছে। এছাড়াও, দেশের ঐতিহ্যবাহী শহরগুলো যেমন ঢাকার লালবাগ কেল্লা, সোনারগাঁয়ের প্রাচীন নিদর্শন, এবং বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ পর্যটকদের আকর্ষণ করে।তবে, পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ এখনও বৈশ্বিক পর্যটন মানচিত্রে পুরোপুরি জায়গা করে নিতে পারেনি। অবকাঠামোগত ঘাটতি, পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাব, এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করছে।

পর্যটনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন: বাংলাদেশের জন্য পর্যটন খাত হতে পারে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি প্রধান উপায়। পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আঞ্চলিক উন্নয়ন, এবং স্থানীয় অর্থনীতির চাঙ্গা করার অসাধারণ সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটকদের জন্য হোটেল, রিসোর্ট, পরিবহন, এবং অন্যান্য সেবা খাতের উন্নয়নও এই খাতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ, সেবা খাতের মান উন্নয়ন এবং পর্যটনস্থলগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে সাসটেইনেবল ট্যুরিজম বা টেকসই পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তোলা বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হবে। পর্যটনের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং স্থানীয় জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, যাতে পর্যটন দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনতে পারে।

পর্যটন এবং শান্তির বার্তা :বিশ্ব পর্যটন দিবসের ২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য— “পর্যটন আমাদের একত্রিত করে, শান্তির পথের সেতু গড়ে”—এটি বাংলাদেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন কেবল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনে না, এটি বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মধ্যে শান্তি, সহমর্মিতা, এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া বাড়ায়। বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে আসার মাধ্যমে তারা এখানকার সংস্কৃতি, ভাষা, এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়। এর মাধ্যমে দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়, যা বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পর্যটন খাতের ভবিষ্যৎ: বাংলাদেশ সরকার পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা, সুন্দরবনকে পরিবেশবান্ধব পর্যটন গন্তব্য হিসেবে উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক পর্যটন স্থলগুলোতে পরিবহন সুবিধার উন্নয়ন এসব উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে বাংলাদেশকে পর্যটন গন্তব্য হিসেবে আরও প্রচার করা জরুরি, যাতে বৈশ্বিক পর্যটকদের আগমন বাড়ে।

বিশ্ব পর্যটন দিবস -কেবল একটি উদযাপনের দিন নয়; এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে পর্যটন আমাদের বিশ্বকে একত্রিত করতে এবং বৈশ্বিক শান্তি ও সমঝোতার সেতুবন্ধন গড়তে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হলে পর্যটন খাতের যথাযথ উন্নয়ন ও প্রসার দরকার। সেই সঙ্গে পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা, অবকাঠামো, এবং সেবা খাতের মান উন্নয়ন অপরিহার্য। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ শুধু দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে না, বরং বৈশ্বিক শান্তি এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।

লেখক: শেখ মাজেদুল হক , সহযোগী অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর email: smh.mkt@brur@ac.bd

মন্তব্য করুন


 

Link copied