নিউজ ডেস্ক ; ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলনকারী পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ওপর ‘স্টুডেন্ট ফর সভেরেন্টি’ হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
বুধবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে দুই সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই দাবি জানান।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, আজকের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ‘স্টুডেন্ট ফর সভেরেন্টি’ যে হামলা চালিয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং এর বিচার চাই। রাষ্ট্রের কাছে আমরা এর জবাব চাই। আমরা জানি কীভাবে এই সংগঠন গড়ে উঠেছিল। আমরা জানি ‘স্টুডেন্ট ফর সভেরেন্টি’ কারা, আর রুপাইয়্যা শ্রেষ্ঠারা কারা। ‘স্টুডেন্ট ফর সভেরেন্টি’ উগ্রবাদী সংগঠন। আর রুপাইয়্যা শ্রেষ্ঠারা হলো যারা রক্ত দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছে। এই স্ট্যাম্প নিয়ে হামলা ছাত্রলীগের সাথে মিলে যায়। যতবারই ফ্যাসিবাদের মানসিকতা মাথা চাড়া দেওয়ার চেষ্টা করবে,তাদেরকে আমরা পায়ের তলায় পিষে ফেলব।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সকলের মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সমতা নিশ্চিতের দাবিতে। কিন্তু সেটি না করে ৭২’র সংবিধানে শুধু এটি জাতিগোষ্ঠী বাঙালিকে প্রাধান্য দেওয়ায় আমাদের বোন আজ হাসপাতালে। আমরা সেই বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল চাই। আমরা যদি এই মুজিববাদী সংবিধান বাতিল করতে না পারি, তাহলে প্রতিনিয়ত এই রকম রক্ত ঝরবে।
ভারতীয় সেনা প্রধানের সাথে তাল মিলিয়ে যারা দ্রুত নির্বাচন চায় তারা এই হামলার পেছনে রয়েছে বলে দাবি করে তিনি আরও বলেন, আপনারা লাশের রাজনীতি বন্ধ করুন। বাংলাদেশে আর কোনও লাশের রাজনীতি চলবে না। এসময় চিকিৎসারত আহত ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীদের লোকজনদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে দ্রুতই বিচারের দাবি জানান তিনি।
নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা যেমন বাঙালি, তেমনি চাকমা, মারমা, তনচংগাসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। সবার কথা বলার অধিকার আছে। সবাই দেশের নাগরিক। কিন্তু আজকের এই ন্যাক্কারজনক হামলার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। গ্রেফতার করে পরের দিন জামিন দিয়ে দিলে হবে না। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সারজিস আলম বলেন, আন্দোলনে আহতরা এখনও হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। সে সময়ে এই ধরনের হামলা আমাদের রাষ্ট্রের ক্ষতকে নির্দেশ করে। যেখানে একই ইস্যু নিয়ে দু’টি গ্রুপ পরস্পর বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে, সেখানে যেই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা তা করেনি। আজকের ঘটনাসহ পূর্বের সকল অপরাধের বিচার করতে হবে। এই বিচার শুধু গাল-গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। এর বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। আজকের ঘটনার স্পষ্ট প্রমাণ আছে। হামলাকারীরা ফৌজদারি অপরাধ করেছে, তাদেরকে কেন এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ১৯৭২-এর সংবিধানে দেশের প্রতিটি জাতিকে স্বীকৃতি না দিয়ে সকলকে বাঙালি বলে একসূত্রে গাঁধতে চাওয়া হয়েছিল। এতে বাকি জাতিসত্তাদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। আজকের হামলার ঘটনাও বাঙালি বলে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। অথচ গত ৫ আগস্টে এই স্লোগানকে স্থায়ীভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ছাত্র-জনতা। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলে সেটি আলোচনার টেবিলে নিরসন সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, হামলাকারীদের ছবি তো স্পষ্ট। এখন হামলাকারীদের নিরাপদ রাখার জন্য ট্যাগিংয়ের রাজনীতি অব্যাহত রয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। আমাদের বিভাজনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পাহাড়ের জনগোষ্ঠীদের প্রতি আহ্বান, আপনারা কারো ফাঁদে পা দেবেন না।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, কিছু ভুঁইফোড় সংগঠন গজিয়ে উঠেছে। তারা ছাত্রলীগের কায়দায় লোকজনের উপর হামলা চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের কায়দায়-তুমি কে? আমি কে? বাঙালি! বাঙালি বলে স্লোগান দিচ্ছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, তাদের গ্রেফতার করুন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামক সংগঠনটি হামলা চালায়। কোনও বিষয়ে মতভেদ থাকলে সেটি আলোচনার টেবিলে সমাধান হবে। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের পাঁচ মাসের মাথায় একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটছে, এটি দুঃখজনক। জাতিগত শান্তি প্রতিষ্ঠায় হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।
এসময় বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য মেহরাব সিফাত, রিফাত রশিদ, লুৎফর রহমান,আবদুল হান্নান মাসুদসহ আরও অনেকে।