সাইফুর রহমান শামীম: দলীয় হাইকমান্ডের পরামর্শে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে কুড়িগ্রাম-২ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন প্রবীণ নেতা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: জাফর আলী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাপা প্রার্থী বর্তমান এমপি পনির উদ্দিনকে আসনটি ছেড়ে দিতে হলো কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে। দলের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন কুড়িগ্রামের আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা। জোট-মহাজোটের কারণে বারবার মনোনয়ন পেয়েও আসনটি ছেড়ে দেয়ায় কষ্ট পেয়েছেন ত্যাগী নেতা হিসেবে খ্যাত জাফর আলীর ভক্ত সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাদের মতে, বারবার সদর আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ায় উন্নয়ন বঞ্চনার পাশাপশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে দলের রাজনীতি। জেলার সার্বিক উন্নয়ন বাধঁাগ্রস্থ হবে আগের মতোই এমন হতাশার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তিনি প্রতিটি ইউনিয়নে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করে তৃণমুলের কর্মীদের উজ্জীবিত করেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ও ওয়ার্ডে নিবার্চনী কমিটি গঠন করা হয় তাঁর নির্দেশে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে কুড়িগ্রাম-২ (সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী) আসনে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নিবার্চিত হলেও আসনটি ছেড়ে দেন তিনি। সেই শূণ্য আসনে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নিবার্চিত হন মো: জাফর আলী। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে এই আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি দলের মনোনয়ন পেলেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সমর্থনে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।
বণার্ঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অধিকারী বর্ষিয়ান নেতা ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: জাফর আলী ২০১৬ ও ২০২২ সালে দলের মনোনয়ন নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিবার্চিত হন। তিনি কিছুদিন জেলা পরিষদের প্রশাসকও ছিলেন। ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার কারণে তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নে টানা পাঁচবার চেয়ারম্যান নিবার্চিত হন। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নানা পদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দীর্ঘদিন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
দলের নেতারা জানান, ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে জাফর আলীর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের নিবার্চিত ভিপি ও জিএস ছিলেন। তিনি শুধু সদর আসন নয় সারা জেলায় আওয়ামীলীগকে সংগঠিত করেছেন তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনপ্রিয়তা দিয়ে। একবার এমপি নিবার্চিত হয়ে তিনি অনেক উন্নয়ন কাজ করার পরেও জোটের কারণে তিনি বলি হচ্ছেন বারবার।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আব্দুল কাদের জানান, পিছিয়ে পড়া কুড়িগ্রামের উন্নয়নের জন্য মো: জাফর আলীর মত একজন জনপ্রিয় নেতার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে কুড়িগ্রামকে বারবার ব্যবহার করা হয়, এটাই কুড়িগ্রামবাসীর জন্য দুভার্গ্য।
জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু জানান, সদর আসনে দীর্ঘদিন ধরে সরকার দলীয় এমপি নেই। ফলে কুড়িগ্রামবাসী অনেক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তে দলের তৃণমূল নেতা-কমর্ীরা হতাশ হয়েছেন। নিশ্চিত বিজয় ছিলো এ আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর। জাতীয় পার্টির সংগঠন দুর্বল জন সমর্থনও এখন তলানীতে ঠেকেছে। গত নির্বাচনেও আওয়ামীলীগকে লাঙ্গলের হয়ে ভোট করতে হয়েছে। এবার লাঙ্গলের প্রার্থীকে বিজয়ী করা সহজ হবে না।