আর্কাইভ  বুধবার ● ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ● ২৩ মাঘ ১৪৩১
আর্কাইভ   বুধবার ● ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নিরাপদ আশ্রয়ে হাসিনার স্বজনরা

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫, দুপুর ০১:৫৭

নিউজ ডেস্ক ;  আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের প্রায় সবাই হামলা-মামলায় জর্জরিত হলেও নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট-স্বজনরা। এরা গত সাড়ে ১৫ বছরে সরকারের মন্ত্রী, এমপি, মেয়র হওয়া ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্যসহ সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করেছিলেন। এর মধ্যে মন্ত্রী ও সমপদমর্যাদায় ছিলেন চারজন। এমপি হয়েছেন অন্তত ১০ জন। দুই সিটিতে মেয়র হয়েছেন তিনজন। সহযোগী সংগঠনের প্রধান হয়েছেন একজন। বৈধ ও অবৈধভাবে সর্বোচ্চ সুবিধায় ছিলেন তারা। অথচ পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তারা সবাই আগেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। একমাত্র শেখ পরিবারের সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ খোকা গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকিদের অবস্থান কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না। ৫ আগস্টের পর গ্রেপ্তারের চিত্রগুলো বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে শেখ হাসিনা তার পরিবারের সদস্যদের তালিকা দিয়েছিলেন। তাঁর বোন ও তাঁদের ছেলেমেয়ে ছাড়া কোনো আত্মীয় নেই বলে দাবি করেছিলেন। পরিবারের সদস্য ছাড়াও তাঁর নিকটাত্মীয় রয়েছেন। যারা দীর্ঘদিন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলেছেন। শাসন ও শোষণ করেছেন। নিয়ন্ত্রণ করেছেন রাষ্ট্রক্ষমতার সবকিছু।   

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার কিছু আত্মীয়-স্বজন ঝড়ের পূর্বাভাস আগাম পেয়ে যান। তখন তারা দেশ ছাড়েন। আবার সুসময় হলেই দেশে ফিরে এসে হাজির হন’। ওই বৈঠকে পাবর্ত্য চট্টগ্রামবিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়কের (মন্ত্রীর পদমর্যাদায়) দায়িত্ব পাওয়া আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ শেখ হাসিনার ডান পাশে বসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকালে আবদুল্লাহকে চোখ-মুখে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা যায় বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও সাবেক এক মন্ত্রী। 

শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তার দুই ছেলে শেখ ফজলে ফাহিম ও শেখ ফজলে নাঈম। শেখ পরিবারের প্রভাব খাটিয়ে শেখ ফজলে ফাহিম বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রধান সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি হয়েছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে শেখ সেলিমের পরিবার আত্মগোপনে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার পতনের আগেই তারা দেশ ছাড়েন। শেখ সেলিমের ভাই শেখ ফজলুল হক মণির দুই সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস। শেখ পরশও দেশ ছেড়েছেন বলে জানা যায়। এখন বিদেশে নিরাপদ জীবন-যাপন করছেন। শেখ সেলিমের ছোট ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ক্যাসিনো বিতর্কের সময় আলোচনায় এসেছিলেন। তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার ভগনিপতি যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীও আত্মগোপনে আছেন। শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসনের এমপি ছিলেন। তার ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময় এই পরিবার ছিল বরিশাল অঞ্চলের হর্তাকর্তা। ৫ আগস্টের পরে হাসানাত আবদুল্লাহ ও ছোট ছেলে সুকান্ত আবদুল্লাহ দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। তবে সাদিক আবদুল্লাহ কোথায় আছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র। তিনি কোথায় আছেন জানা যাচ্ছে না। জানা গেছে, হাসানাত আবদুল্লাহ ভারতে আছেন তার মেয়ে আঞ্জুমানারা কান্তা আবদুল্লাহর কাছে। কান্তা একজন ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করেন।

শেখ হাসিনার ফুফাতো বোন শেখ ফাতেমা বেগমের এক ছেলে নূর-ই আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী) একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন। আরেক ছেলে মুজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী) ফরিদপুর-৪ আসন থেকে টানা তিনবারের স্বতন্ত্র এমপি ছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে এই দুই ভাইও আত্মগোপনে। শেখ হেলালের ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় দেখা গেছে। তবে সর্বশেষ তার অবস্থান নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা, তিনি কি দেশেই আছেন না বিদেশে গেছেন। 

আওয়ামী সরকারের অন্যতম সুবিধাভোগীদের একজন ঢাকা ওয়াসার সাবেক বিতর্কিত এমডি তাকসিম এ খান। তিনি শেখ হাসিনার ফুপা ইলিয়াস চৌধুরীর ভগনিপতি। সেদিক থেকে তিনি শেখ হাসিনার ফুপা হন। তিনি ৫ আগস্টের পর যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে আলোচনা আছে। শেখ পরিবারের আরেক প্রভাবশালী সদস্য বঙ্গবন্ধুর চাচাতো ভাই শেখ কবির হোসেন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি ও বাংলাদেশ বিমা সমিতির সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন তা কেউই বলতে পারছেন না। আরেক চাচাতো ভাই শেখ হাফিজুর রহমান বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব। ৫ আগস্টের পর তাদের কোথাও দেখা যায়নি। এ ছাড়া শেখ রেহানার দেবর মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। গত চার মেয়াদে আওয়ামী লীগের অন্যতম ক্ষমতার বলয় গড়ে উঠেছিল তাকে কেন্দ্র করে। তিনি সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন ব্যবহার করে দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ৫ আগস্টের পর থেকে তারিক আহমেদ আত্মগোপনে আছেন।

মন্তব্য করুন


বাণিজ্যিক বিভাগ
নেওর ভবন (২য় তলা), স্টেশন রোড (সোনালী ব্যাংকের বিপরীতে), রংপুর।
বার্তা বিভাগ
উৎসর্গ ভবন (৪র্থ তলা), স্টেশন রোড, রংপুর।
ই-মেইলঃ: uttorbangla@gmail.com
© 2012 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | উত্তরবাংলা ডটকম এ প্রকাশিত কোনও সংবাদ, ছবি পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।
Privacy Policy | Terms of Service | About Us
Link copied