আর্কাইভ  শনিবার ● ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ● ১০ ফাল্গুন ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
‘নীলাম্বরী’ পৌর শিশু পার্ক

৪২ বছর পর দৃষ্টিনন্দন পার্ক পেল নীলফামারীর শিশুরা

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ১২:০০

দীর্ঘ ৪২ বছর পর শিশু পার্ক পেল নীলফামারীর শিশুরা। শুক্রবার বিকালে শহীদ মিনার সংলগ্ন “নীলাম্বরী” পৌর শিশু পার্কের ফিতা কেটে উদ্বোধণ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।

Advertisement

স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ মহকুমা থেকে জেলায় উর্ত্তীণ হবার ৪২ বছর পর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো নীলফামারীর শিশু ও অভিভাবকদের। যে ছোট্ট সোনামনিরা হাফিয়ে উঠেছিল একটু বিনোদনের জন্য সেই শিশুদের জন্য এবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধোধন করা হলো শিশুপার্ক।
নাম রাখা হয়েছে “নীলাম্বরী” পৌর শিশু পার্ক। পার্কটির প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা রাখা হলেও জেলা প্রশাসকের কাছে আগামীতে উন্মুক্তর রাখার জন্য আহবান জানান অভিভাবকরা। 
শুক্রবার(২১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নীলফামারী পৌর প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকায় শিশু পার্কটি স্থাপন করা হয়েছে। শিশুপার্কটি উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।
পৌর প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্ধোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহম্মদ মহসিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র, সিভিল সার্জন ডাঃ হাসিবুর রহমান, বীরমুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মন্টু, পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, ছাত্র প্রতিনিধি শ্রেষ্ঠ সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ মেহেদী হাসান আশিক ও সদস্য সচিব আলিফ সিদ্দিকী প্রান্তর প্রমুখ। 
শিশুদের মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে নির্মিত শিশু পার্কে নানা খেলাধুলা ও রাইটস রয়েছে। যা ঢাকা শিশু পার্কের আদলে তৈরী করা হয়েছে। শিশুপার্কের উদ্ধোধনে জেলা প্রশাসকের সাথে উপস্থিত শিশুরাও ফিতা কেটে উদ্ধোধনে শরিক হয়। উদ্ধোধন অনুষ্ঠানে অসংখ্য শিশুরা এসে প্রথম দিনের আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠে শিশুপার্ক পেয়ে। 
এসময় তৃতীয় শ্রেনীর শিশু সিগ্ধা ইসলাম বললেন, শিশু পার্ক পেয়ে আমি অনেক খুশী। এখন বিকালে এসে শিশুপার্কে খেলাধুলা ও রাইটসে উঠতে পারবো। এতো দিন ঘরে বসে থাকতে হতো।
দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী রায়হান বারী বললেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন থেকে শিশুপার্কের অভাব বোধ করতাম। দেখেছি এ নিয়ে কত দাবি ছিল। কিন্তু আমরা তখন শিশুপার্ক পাইনি। অবশেষে শিশু পার্কের আশা পূরণ হলো। 
অভিভাবক মাসুদুল ইসলাম বলেন, নীলফামারী একটি পুরাতন মহকুমা শহর ছিল। যা ১৯৮৩ সালে জেলায় পরিনত হয়। কিন্তু শিশু-কিশোরদের বিনোদনের কোনো সুব্যবস্থা ছিল না। শহরের বড় মাঠ ও তিস্তা ক্যানেলপাড়ে শিশুদের নিয়ে যেতে হতো। দীর্ঘদিন পরে হলেও ২০২৫ সালে ২১ ফেব্রুয়ারীর দিনে আমরা শিশুপার্ক পেয়ে আনন্দিত। শিশুপার্কের দাবি আজ আমাদের পূরণ হলো। এ জন্য সকল অভিভাবকরা পৌর প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 
শহরের প্রবীণ আব্দুল্লাহ হক(৭০) বলেন, আমার সন্তানরা বিনোদন ছাড়াই বড় হয়েছে। কষ্ট হত যখন নাতি-নাতনীদের নিয়ে শুধু বড় মাঠে হাটতাম। তাদের মানসিক ও শারীরিক বিনোদনের জন্য এজেলায় কিছুই ছিল না। এখন প্রতিদিন তাদের নিয়ে এই পার্কে আসবো। 
পৌরসভার প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকে শিশুপার্ক স্থাপনের দাবি জানান। এতে জেলা প্রশাসক স্যার, সার্বিক সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা দিয়ে শিশুপার্ক স্থাপনে অবদান রেখেছেন। নীলফামারীর নামানুসারে নীলাম্বরী নামকরণ করা শিশুপার্কের। এর মাধ্যমে শিশুদের চিত্তবিনোদনের অভাব পূরণ হবে। 
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, শিশুদের বিনোদনের অনেক অভাব রয়েছে। বিগত দিনে শিশুদের জন্য কিছু করার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাদের কথা বিবেচনা করে শিশু পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। শিশুদের জন্য পার্কটি উন্মুক্ত করে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।
প্রকাশ্য যে, ৫৮ শতক জমিতে নীলফামারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন এক কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে একটি শিশু পার্ক স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় পৌরসভা। সে সময়ে জমির মালিকা নিয়ে জেলা পরিষদের সঙ্গে দ্বন্দে উচ্চ আদালতে মামলা গড়ালে থেমে যায় সে প্রকল্প। এরপর সে মামলার নিষ্পত্তি হলেও উদ্যোগের অভাবে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি জেলাবাসীর। আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর জন প্রতিনিধিদের অপসরণ করে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে অবশেষে পৌর প্রশাসক এবং জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ৬ বছর পর সে প্রত্যাশা পূরণ হলো।

মন্তব্য করুন


Link copied