নিউজ ডেস্ক: রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাণিজ্যিকভাবে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বগুড়া বিমানবন্দর। চলতি বছরে জুনের আগে তিন ধাপে কাজ শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে নতুন করে রানওয়ে নির্মাণের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ টাকা চলতি অর্থবছরেই খরচ করা হবে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে জমি অধিগ্রহণ ও তৃতীয় ধাপে অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা হবে। এতে বগুড়াবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে চলেছে।
এদিকে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়ে নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরই বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চলাচলের উপযোগী করে রানওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। জানা যায়, বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালুর কথা থাকলেও দীর্ঘদিন এটি শুধু বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। চাহিদা ও সম্ভাবনা বিবেচনায় বেবিচক এ বিমানবন্দর যাত্রীবাহী ও বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভবিষ্যতে বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ফুট। এ রানওয়ে ছোট আকারের প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের উপযোগী। আন্তর্জাতিক মানের করতে বিমানবন্দরটি তিন ধাপে আধুনিকীকরণ হবে। এজন্য আরও ৫৫০ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্কারে ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে প্রথম পর্যায়ে রানওয়েটি ৬ হাজার ফুট পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। যা পরে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত হবে। এটি হলে পাশের নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসার প্রধান হাব হবে বগুড়া।
এদিকে ২০ নভেম্বর দেশের একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় শেষ পৃষ্ঠায় ‘প্রতিহিংসায় বগুড়ায় ২৮ বছরেও উড়ছে না বিমান’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ায় হওয়ায় ১৫ বছর এখানে কিছুই দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। এ ছাড়া ‘কী অপরাধ ছিল বগুড়াবাসীর’ এমন শিরোনামেও সংবাদ প্রকাশ করে দেশের একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকা। বগুড়া নিয়ে সংবাদগুলো প্রকাশের পর নজরে আসে অন্তর্বর্তী সরকারের।
বগুড়ার রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি সিপার আল-বখতিয়ার জানান, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়সহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার বিদেশি পর্যটক বগুড়ায় আসেন। শিল্প, শিক্ষা ও ব্যবসায় সমৃদ্ধ হলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাড়ি বগুড়ায় হওয়ায় পতিত সরকার বিমানবন্দর স্থাপন করেনি। ফলে উন্নয়নের গতি বাড়েনি এ অঞ্চলে। বিমানবন্দর চালুর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
বগুড়া জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, বগুড়া-১ আসনের এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. মোশারফ হোসেন চৌধুরী জানান, আমি বগুড়ার মানুষ হিসেবে অর্থ উপদেষ্টাসহ সরকারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছি। বিমানবন্দর নির্মাণে তাঁদের একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর বগুড়ার কোনো উন্নয়ন হয়নি। তারেক রহমানের বগুড়ায় এবার বিমানবন্দর হচ্ছে এটা জেলাবাসীর জন্য আনন্দের সংবাদ।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, কয়েক দিন আগে ঢাকায় ডিসি সম্মেলন হয়েছে। সেখানে বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা ও বিমানবন্দর নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বগুড়ায় বাণিজ্যিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ টাকায় প্রথম ধাপের কাজ শেষ করা হবে। পরে জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কাজ দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে শেষ করা হবে।