আর্কাইভ  সোমবার ● ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ● ১২ ফাল্গুন ১৪৩১
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে প্রত্যন্ত পল্লীর পুকুরে মিঠা পানিতে বাংলা মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ

রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ১২:০০

Advertisement

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:  কুড়িগ্রামের রাজারহাটের প্রত্যন্ত পল্লীতে পুকুরে বাংলা বা দেশীয় মিশ্রিত মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতা পেয়েছে চাষীরা। এতে করে মাছ চাষের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছে কুড়িগ্রামে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে এই পিছিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ। সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজার এলাকায় পল্লব চন্দ্র রায়ের ৪০শতক একটি পুকুরে জেলেরা জাল টানছে। পুুকুর পাড়ে জালে ধরা মাছ আনতেই স্থানীয়রা অবাক বড় বড় সাইজের গলদা চিংড়ি মাছ দেখে! কিছুটা আশ্চর্য হবার মতোই মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ির চাষ! জেলায় প্রথম বারের মতো কার্প, পাঙ্গাস,সিলভার কাপসহ দেশীয় জাতের মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ। কার্প জাতীয় মাছের তুলনায় এ জাতীয় মাছ চাষে অধিক লাভও পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ৭মাস আগে পিএল সাইজের ৬শ পিস গলদা চিংড়ি ছাড়া হয় পুকুরে। জেলার মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতা দেখে খুশি স্থানীয়রাও।

এই মাছ খেতেও সুস্বাদু। অন্যান্য মাছের সাথে চিংড়ি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এতদিন পুকুরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ হতো। বেসরকারি সংস্থা পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে আরডিআরএস বাংলাদেশের সহায়তায় প্রথমবারের মতো দেশীয় কার্প জাতীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছে মৎস্য চাষীরা। এক খাবারেই পুকুরের সব মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় আগ্রহী হচ্ছেন অন্যরাও। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। রফতানিযোগ্য গলদা চিংড়ি চাষ এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে মৎস্য চাষীরা লাভবান হবেন এবং কুড়িগ্রাম জেলার অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা।


মৎস্যচাষী পল্লব চন্দ্র রায় বলেন, প্রতি কেজিতে ৮/১০টি করে গলদা চিংড়ি উঠছে। বর্তমান ১২শ টাকা কেজি বাজার দরে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করবেন তিনি। এই মাছ চাষে মাছের খাবারসহ পুকুর প্রস্তুত করণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫/৩০হাজার টাকা। সময় মতো খাবার ও সঠিক পরিচর্যা করায় মাছের ওজনও ভালো হয়েছে। এক খরচে বাড়তি দেশীয় মাছ বিক্রি করে আরও লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে জানান চাষী।


মাধবী রাণী বলেন, বাজারে গলদা চিংড়ি মাছের দাম বেশি। গরিব মানুষের সার্মথ্যের বাইরে এই মাছ। জিনিসপত্রের যে দাম তাতে করে এই মাছ খাওয়া আর স্বপ্ন দেখার মতো। এখন নিজের পুকুরে দেশীয় মাছের সাথে বাড়তি খরচ না করেই গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। সাইজেও বড় খেতেও সুস্বাদু।


স্থানীয় মৎস্য চাষী বলেন,বাংলা বা দেশীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ হয় এটা আমাদের জানা ছিল না। কিন্তু পল্লব রায়ের পুকুরে গলদা চিংড়ির চাষ দেখে অবাক হয়েছি। সামনে আমার নিজের পুকুরেও এই মাছ চাষ করব।


স্বপ্না রাণী বলেন, সরকারি-বেসরকারি ভাবে সহযোগতিা পেলে আমাদের গ্রামে আরও অনেক পুকুর আছে সেখানে গলদা চিংড়ি চাষ করা সম্ভব।
আরডিআরএস বাংলাদেশের টেকনিকেল অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাট উপজেলার ১০জন চাষীর প্রায় চার একর পুকুরে ছয় হাজার পিস গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে। কার্প জাতীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষের জন্য খুবই অনুকূল পরিবেশ এই জেলায়। তাই গলদা চাষ অত্যন্ত লাভজনক ও সম্ভাবনাময়। আগামীতে আমরা গলদা চিংড়ি চাষে প্রসারের পরিকল্পনা করছি।


আরডিআরএস বাংলাদেশের কৃষি ইউনিট টিম লিডার বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, উত্তরবঙ্গে মৎস্য চাষীদের মধ্যে গলদা চিংড়ি চাষে আগ্রহ কম। ফলে সুস্বাদু এই মাছ চাষে কুড়িগ্রামে চাষ হচ্ছে। এর প্রসার বৃদ্ধি করা গেলে আগামীতে উচ্চ মূল্যের এই মাছ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্যত্র রপ্তানি করা সম্ভব। এতে করে জেলার অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা রাখবে।


রাজারহাট উপজেলা মৎস্য অফিসার এমদাদুল হক বলেন, সরকারি-বেসরকারি ভাবে গলদা চিংড়ি চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জেলায় ২৬হাজারের অধিক পুকুরে সাড়ে ২০হাজার চাষী মাছ উৎপাদন করছে।

মন্তব্য করুন


Link copied