নিউজ ডেস্ক: রোজা হলো আল্লাহর জন্য আত্মসংযম অবলম্বনের নাম। তাই রোজা অবস্থায় মুসলিমরা কিছু বিষয় পরিহার করে চলে। এর মধ্যে কিছু বিষয় এমন যার কারণে রোজা ভেঙে যায়, যেমন পানাহার ও স্ত্রী সহবাস। আর কিছু বিষয় এমন যেগুলোর কারণে রোজা ভেঙে যায় না, তবে তাতে রোজা হালকা হয়ে যায়। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় এসব কাজকে মাকরুহ বা অপছন্দনীয় কাজ বলা হয়। নিম্নে রোজাদারের জন্য মাকরুহ কাজগুলো তুলে ধরা হলো।
১. মিথ্যা বলা, পরনিন্দা, গালি দেওয়া, অনর্থক গল্প-আড্ডা, কাউকে কষ্ট দেওয়া। এসব কাজ সবসময়ের জন্যই হারাম। রোজা রেখে এগুলো করা আরো গুরুতর। হাদিসের ভাষ্যানুসারে এসব কাজে রোজার মহিমা ক্ষুণ্ন হয়।
২. রোজা রেখে বিনা প্রয়োজনে কোনো কিছুর স্বাদ নেওয়া এবং কোনো কিছু দাঁত দিয়ে চাবানো। নারীদের জন্য তরকারির লবণ দেখা প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষত যখন তাঁর স্বামী বদমেজাজি হয়। লবণ দেখার অর্থ হলো জিহ্বা দ্বারা লবণ পরিমাপ করে সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দেওয়া। একইভাবে কোনো শিশুকে যদি দাঁত দিয়ে খাবার চিবিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন থাকে তবে তা করা যাবে। যখন খাবার চিবিয়ে দেওয়ার মতো রোজাহীন কোনো ব্যক্তি থাকবে না এবং বিকল্প কোনো খাবারও থাকবে না। (দুররুল মুখতার : ৩/৪৫৩)
৩. কোনো নারী-পুরুষের জন্য রোজা থেকে পরস্পরকে চুমু খাওয়া, আলিঙ্গন করা ও শরীর স্পর্শ করা মাকরুহ, যখন বীর্যপাত ও সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। একইভাবে ঠোঁটে চুমু খাওয়াও মাকরুহ তাতে সঙ্গম ও বীর্যপাতের ভয় থাকুক বা না থাকুক।(রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৫৪)
৪. আতর ও সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়া মাকরুহ নয়। তেল ও সুরমা ব্যবহার করাও মাকরুহ নয়। তবে বুজুর্গ আলেমরা বলেন, রোজাদারের জন্য অতিরিক্ত সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যবর্ধক বিষয় গ্রহণ করা রোজার উদ্দেশ্য পরিপন্থী। কেননা রোজার উদ্দেশ্য ত্যাগ ও সংযম। (দুররুল মুখতার : ৩/৪৫৫)
৫. রোজা রেখে পেস্ট ব্যবহার করে ব্রাশ করা মাকরুহ। কেননা পেস্টের স্বাদ অনুভূত হয় এবং তা পেটের ভেতরও চলে যায়।
৬. রোজা রেখে মিসওয়াক করা মাকরুহ নয়। এমনকি দুপুরের পরেও মাকরুহ নয়। বরং মিসওয়াক করা অন্যান্য দিনের মতোই একটি সুন্নত। (আল বাহরুর রায়িক : ২/৪৯১)
৭. দুর্বলতার আশঙ্কা না থাকলে হিজামা তথা শরীর থেকে দূষিত রক্ত বের করা মাকরুহ নয়। আর দুর্বলতার আশঙ্কা থাকলে তা মাকরুহ হবে। কাউকে রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য হবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/১৯৯)
৮. রোজা রেখে গরগরা করে কুলি করা এবং নাকের নরম ভাগের উপরে পানি পৌঁছানো মাকরুহ। কেননা এতে পেটের ভেতর পানি চলে যাওয়ার ভয় থাকে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/১৯৯; (রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৫৯)
৯. রোজা রেখে পানির ভেতর বায়ু ত্যাগ করা মাকরুহ। এতে পেটের ভেতর পানি চলে যাওয়ার ভয় থাকে। রোজা রেখে চাপ পায়খানা করা মাকরুহ। এতে ক্ষুধা বেড়ে যেতে পারে এবং দুর্বলতা তৈরি হতে পারে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/১৯৯)
১০. মুখের ভেতর থুথু জমিয়ে তা গিলে ফেলা সব সময়ের জন্য অপছন্দনীয়। রোজা অবস্থায় এমনটি করা মাকরুহ। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/১৯৯)
১১. রোজার রেখে এমন কোনো কাজ করা অনুচিত যা মানুষকে রোজা ভাঙ্গতে প্রলুব্ধ করে। যেমন কঠোর পরিশ্রমের কাজ করা অথবা শেষ বিকেলে সুস্বাদু খাবার রান্না করা ইত্যাদি। (দুররুল মুখতার : ৩/৪৬০)
১২. সাহরি বিলম্বে খাওয়া উত্তম। তবে এতটা বিলম্ব করা মাকরুহ যাতে সময় আছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ হয়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ১/২০০)
১৩. ইফতার দ্রুত করা মুস্তাহাব। তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে এবং সময় নিয়ে সন্দেহ থাকলে নিশ্চিত না হয়ে ইফতার করা অনুচিত। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৫৯)
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা