আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১১ মার্চ ২০২৫ ● ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১১ মার্চ ২০২৫

দাবিতে অটল থাকতে পারছে না এনসিপি

সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, দুপুর ১০:১২

নিউজ ডেস্ক: গণঅভ্যুত্থানের পর জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নানা সময়ে দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে সরব থেকেছেন অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারী ছাত্রনেতারা। শুরুর দিকে রাষ্ট্রপতির অপসারণ, নতুন সংবিধান প্রণয়ন, স্বতন্ত্র কাউন্সিলরকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ, জুলাই ঘোষণাপত্র, গণপরিষদ নির্বাচন, সর্বশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি এসেছে। তবে কোনো দাবিতেই অটল থাকতে পারেননি ছাত্রনেতারা। শুধু ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ছাড়া নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দেওয়া দাবিগুলোর কোনোটিই সফলতার মুখ দেখেনি। 

সাম্প্রতিক সময়ে একই সঙ্গে সংসদ এবং গণপরিষদ নির্বাচন করার দাবি তুলেছেন সদ্য ঘোষিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। পাশাপাশি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিও রয়েছে তাদের। দলটির নেতারা বলছেন, কোনো দাবি থেকে তারা সরেননি। সব দাবি তাদের রাষ্ট্র প্রকল্প। এখন না হোক, আগামীতে তাদের সক্ষমতা তৈরি হলে এসবের বাস্তবায়ন ঘটাবেন। 

গণঅভ্যুত্থানের পর গত সেপ্টেম্বরে আট দফা দাবি নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি শহীদ মিনারে আত্মপ্রকাশ করে। দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, ছাত্র-জনতা হত্যায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি নেওয়া এবং গণপরিষদ গঠন করে গণভোটের মাধ্যমে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির জন্য গণআলোচনার আয়োজন।  
 
এর পর অক্টোবরে শহীদ মিনার থেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে স্থায়ীভাবে নির্মূল করতে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দাবিগুলো হলো– ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে স্থায়ী নিষিদ্ধ করা; রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে পদচ্যুত করা; এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে প্রক্লেমেশান অব রিপাবলিক ঘোষণা;  শেষ তিন সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা  এবং ওই তিন নির্বাচনে জয়ীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে যেন তারা অংশ নিতে না পারে। সে সময় রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবিতে ছাত্রনেতাসহ নানা মহল সরব হলেও বিএনপির আপত্তির মুখে নীরব হয়ে যান তারা। তবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়।

এসব দাবি থেকে পিছিয়ে আসার ব্যাপারে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বাধাকে দুষছেন এনসিপি নেতারা। এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ বলেন, আমরা যে দাবিগুলো করছি তা রাষ্ট্র পুনর্নির্মাণ এবং পুনর্গঠনের স্তম্ভ। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে দেখছি, রাষ্ট্রের কর্তা এবং গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার রাজনৈতিক দলগুলো বাদ সাধছেন। স্বাভাবিকভাবে তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা বেশি, তাই আমরা মুখোমুখিতে যাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। এটা আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান। আমরা আজকে পারিনি, এতে রাজনীতি শেষ হয়ে যায়নি। প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে দাবিগুলো করেছি। এই প্রতিটি দাবি ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হচ্ছে। ভবিষ্যতে যখন রাষ্ট্রের সেই শক্তি আমরা অর্জন করতে পারব, তখন সেটি বাস্তবায়ন করব।  

এদিকে গত ডিসেম্বরে নাগরিক কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সমর্থিত যেসব স্বতন্ত্র প্রার্থী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার পক্ষে ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাদের স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ অনুযায়ী ‘প্রশাসক’ হিসেবে নিয়োগের দাবি তোলা হয়। কাউন্সিলরদের সঙ্গে তারা সমাবেশও করে। পরে এটি নিয়ে সমালোচনা হলে পিছিয়ে আসেন ছাত্রনেতারা। সম্প্রতি নাগরিক কমিটির নেতা মোহাম্মদ এজাজকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

গত ৩১ ডিসেম্বর জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্য ব্যাপক আয়োজন করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটি। তবে বিএনপির আপত্তিতে সেটিও আলোর মুখ দেখেনি। ঘোষণার আগের দিন রাতে সরকার থেকে ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এটি নিয়ে এখন আর কথা বলতে দেখা যায় না। 

গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানান ছাত্রনেতারা। সেই দাবিও আড়াল হওয়ার পথে। তবে আলাউদ্দীন মোহাম্মদ বলেন, সরকার হুট করে বড় নির্বাচন না করে পাইলটিং করে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা যাচাই করুক। আমরা চাই, জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার যেন অন্তত সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেয়। 

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি বলেছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যেই গণপরিষদ এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব। তবে যে কোনো নির্বাচনে যাওয়ার আগে দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়ন দেখতে চান তারা। তারপর নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।  

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, জাতীয়ভাবে যে সংকটগুলো মনে করছি, তার সমাধানের পথ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে দাবির কথা তুলেছি। এখন বিএনপিসহ অন্য দলগুলো যদি বৃহত্তর স্বার্থের চিন্তা না করে পুরোনো রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা বা রাজনৈতিকভাবে বিরোধিতার জায়গা থেকে বিরোধিতা করে, তাহলে আগামী নির্বাচনে জনগণ রায় দেবে। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই জারি রাখব।  খবর-সমকাল

মন্তব্য করুন


Link copied