আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১১ মার্চ ২০২৫ ● ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১১ মার্চ ২০২৫

ধর্ষকের পক্ষে ওকালতি করায় আইনজীবী-বৈষম্যবিরোধী সংঘর্ষ, আহত ১১

সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, রাত ০৮:০৫

নিউজ ডেস্ক:  জামালপুরে আইনজীবীদের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের ১১ জন আহত হয়েছেন। সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে জামালপুর জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এই ঘটনা ঘটে।

সোমবার দুপুরে জেলা জজ আদালতে একটি ধর্ষণ মামলায় আইনজীবীরা আসামিপক্ষে অংশ নিয়ে শুনানি করেন। মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে আসামিকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ধর্ষণের ঘটনাটি মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

ধর্ষকের পক্ষে আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেওয়ায় আদালত চত্বরে অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার নেতাকর্মীরা। শুনানি শেষে ওই মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম তরফদারকে জেরা শুরু করেন তারা। তাদের মধ্যে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুল আওয়াল ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা আইনজীবীদের ওপর চড়াও হয় এবং হামলা করে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এ সময় অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান (৮০), অ্যাডভোকেট আব্দুল আওয়াল (৫৫), অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক (৪৭), অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম তরফদার (৫৫), আইনজীবী সহকারী রুকনুজ্জামান (৪০), শিক্ষার্থী দয়াময়ী এলাকার জাহাঙ্গীরের ছেলে ইমন (২০) ও ইশান (১৫), সদর উপজেলার ইটাইল এলাকার মোজাম্মেলের ছেলে মোয়াজ (১৯), হাসিল বটতলা এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে তারেক (২৩), পৌর শহরের মুসলিমাবাদ এলাকার শাহজাদার ছেলে শিশির (১৮) এবং ইসলামপুর উপজেলার হৃদয় (২৩) আহত হয়।

আহতদের মধ্যে অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোয়াজ, হৃদয়, তারেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি মোয়াজ জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিল।

শিক্ষার্থী ও আইনজীবীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ইমন ও ইশান নামে সহোদর দুই ভাইকে আটক করে তালাবদ্ধ করে রাখেন আইনজীবীরা। পরে পুলিশ তাদের নিরাপদে আদালত থেকে বের করে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র মাহমুদুল হাসান বিবেক বলেন, ‘এক প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ধর্ষণের বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণ করতে জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদে আদালতে অবস্থান নেয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশে কতিপয় আইনজীবীরা আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। আমাদের দাবি, যেসব আইনজীবী আমাদের ওপর হামলা করেছে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হোক।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিশাদ রেজওয়ান বাবু বলেন, ‘আদালত চলাকালীন সময়ে কিছু দুষ্কৃতকারী লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রবেশ করে আইনজীবীদের হুমকি দেয়। তারা এ সময় আইনজীবীদের ওপর হামলা চালিয়ে চার জন আইনজীবীকে আহত করে। জেলা আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, ‘নিজের বিচার নিজেই করে ফেলার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইনজীবীদের সঙ্গে ছাত্রদের ঝামেলা হয়েছে, ঝামেলার বিস্তৃতি কতটুকু তা পর্যালোচনা করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি, অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন


Link copied