আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৮ মার্চ ২০২৫ ● ৪ চৈত্র ১৪৩১
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৮ মার্চ ২০২৫

সালাহউদ্দিন ও কাজী ইব্রাহিমের উর্দু কথোপকথন, যা বলছেন হাসনাত

সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, বিকাল ০৫:২৯

Ad

Advertisement

নিউজ ডেস্ক:  ঘরোয়া আলাপচারিতায় ধর্মীয় বক্তা, হেফাজত ও বিএনপি নেতার উর্দু ভাষায় আলাপচারিতার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

 

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে ২০১৩ সালের ৫ মের শাপলা চত্বরের কর্মসূচি নিয়ে আলাপ করতে দেখা যায়। এসময় সেখানে উপস্থিত বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদও উর্দু ভাষায় আলাপ এগিয়ে নেন।

আলাপচারিতার সময় আত্মপ্রকাশ করা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকসহ আরও কয়েকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ভিডিওটি গত বুধবার (১২ই মার্চ) কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর শাখার ইফতার মাহফিলের পর এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সময় ধারণ করা হয় বলে জানিয়েছেন সেখানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি।

তারা বলছেন, হালকা মেজাজের ঘরোয়া আলোচনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া এবং সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে আলাপ-আলোচনার কিছু নেই।

তবে তাদের মতে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু না থাকলেও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ নিয়ে দেখা গেছে নানা প্রতিক্রিয়া। আর উর্দু ভাষার সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেই এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

কী আলাপ করছিলেন তারা?

৩৮ সেকেন্ডের ভিডিওটির বেশিরভাগ অংশজুড়েই ধর্মীয় বক্তা কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে ২০১৩ সালের ৫ মে নিয়ে আলাপ করতে দেখা যায়।

১১ বছর আগের সেই দিনটিতে কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ও নারী নীতির বিরোধিতাসহ ১৩ দফা দাবিতে ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির ওই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ছড়িয়েছিল দিনভর উত্তেজনা ও সহিংসতা।

আলাপচারিতায় সেই প্রসঙ্গ টেনে কাজী ইব্রাহিম বলেন, ‘৫ মে জো কাতালে আম হুয়া ভোহা মে মজুদ থা। আখরি শাকস জো স্টেজ সে উৎরা ভো মে থা। তাব মৌলানা সাইদুর রহমান মুঝকো ওয়াহা উঠা লিয়া’।

বাংলা করলে যার অর্থ দাঁড়ায়, ৫ মে যখন গণহত্যা চলছিল তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। স্টেজ থেকে নামা শেষ ব্যক্তিও আমি ছিলাম। তখন মাওলানা সাইদুর রহমান আমাকে ওখান থেকে তোলেন।

তার পরপরই মামুনুল হক ‘মগার’ বা ‘কিন্তু’ দিয়ে শুরু করে কিছু একটা বলেন যেটা ভিডিওতে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে না।

সেখান থেকে কাজী ইব্রাহিম আবারও বলা শুরু করেন, ভো এক বাত হ্যায়, মুসলমান যাব কাতিল কে সাথ হাত জোর লেতে হ্যায় না তাব মুসলমান হার যাতে হ্যায় অর্থাৎ একটা কথা আছে যে মুসলমান যখন হত্যাকারীর সঙ্গে হাত মেলায় তখন মুসলমান হেরে যায়।

এরপর বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সুনিয়ে জানাব, আগার হাম মওকে কা বাত কারতে হ্যাঁ তো ইস মওকে কো আগার হাম ইস্তেমাল নেহি কারে তো হাম’

যার অর্থ দাঁড়ায়- শুনুন জনাব, যদি আমি সুযোগের কথা বলি তাহলে আমরা যদি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার না করি তবে...’ – এটুকু বলেই যারা ভিডিও করছে তাদের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে তিনি কিছু একটা বলতে শুরু করলে ভিডিও শেষ হয়ে যায়।

উর্দুতে কথা বলার বিষয়ে যা বলছেন উপস্থিত ব্যক্তিরা

হেফাজতে ইসলামের ইফতার মাহফিলের পর মাদ্রাসারই একজনের ঘরে অনানুষ্ঠানিক গল্পের আসরে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।

তিনি বলেন, ওইটা পরস্পর কথাবার্তার মধ্যে, হাস্যরসের এক পর্যায়ে কিছু কথাবার্তা বলা হয়েছে। এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনার কিছু নাই। মানুষতো কত রকমভাবেই নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক ভাবের আদানপ্রদান করে, মতবিনিময় করতেই পারে।

আলোচনায় কেবল উর্দুতেই না, হিন্দি আরবি ও বাংলাতেও আলাপ হয়েছে দাবি করেন মামুনুল হক। তিনি বলেন, একেকজন একেকভাবে কথাবার্তা বলছিলো।

আলাপচারিতায় অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অবশ্য বিবিসি বাংলাকে বলেন, জাস্ট এক-দুই মিনিট ওনারা হয়তো ওই ল্যাংগুয়েজে (উর্দু ভাষায়) কথা বলেছেন... সবাই ওখানে বাংলাতেই কথা বলেছে।

তিনি বলেন, আমরা হেফাজতে ইসলামের বারিধারার মাদ্রাসায় ইফতারের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। মাগরিবের নামাজের পর আমাদের চা খাওয়ানোর জন্য বসিয়েছে। ওখানে আলেমরা কমফোর্ট ফিল (স্বাচ্ছন্দ্য বোধ) করে যে ভাষায়, সেটাতেই কিছুটা কথাবার্তা বলেছে।

এটাকে সামাজিক আলোচনা উল্লেখ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘মাওলানা সাহেব শাপলা চত্বরে – ওনাদের ভাষায় কতলে আম মানে গণহত্যার কথা তুলে বলছিলেন যে ওখানে উনি ছিলেন এবং উনিই সর্বশেষ ব্যক্তি ছিলেন যিনি স্টেজ থেকে নেমেছেন। এই কথাটাই উনি নিজের ভাষায় বলেছেন’।

তিনি বলেন, ‘চা-টা খেতে বসে কথা প্রসঙ্গে উনি নিজের ইমোশন প্রকাশ করলেন যে ওনাদের ওপর এমন অত্যাচার হয়েছে, উনি নিজে এটার ভিক্টিম যার অন্য কোনো অর্থ নেই।

দীর্ঘ দশ বছর ভারতে থাকার প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সেখানে এই ভাষাটি চলতো।

কথা প্রসঙ্গে ওই ভাষায় আলাপ করলেও তা ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, এগুলোকে ভিডিও করে কী বোঝাতে চায়, আমিতো বুঝি না।

এসময় উর্দু ও হিন্দি ভাষায় ডিপ্লোমা আছে উল্লেখ করে আরবিও কিছুটা চর্চা করা হয় বলে জানান এই বিএনপি নেতা।

এদিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে সেদিন আলোচনার সময় উপস্থিত থাকা হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, ইফতারের পর একটি ঘরে বসলে কেউ সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে উর্দুতে কথা বলে। সালাহউদ্দিন সাহেবতো উর্দুতে অনেক পারদর্শী। তখন এটাকে উনি উর্দুতে রিপ্লাই (জবাব) দেন এবং ওখানে দুই-এক মিনিটের মতো উর্দুতে কথা হয়। ওই ক্লিপটাকেই ধরা হয়েছে, আর কিছুই না।

তিনি বলছেন, সালাহউদ্দিন ভাই বলতেছিলো এরকম যে আপনারা হুজুররা অনেকগুলো ভাগে বিভক্ত। আপনারা যদি এত বিভক্ত হন আমরা যারা হুজুর না, আমরা কোন পথে যাব- এই টাইপের মনে হয় কোনো একটা কথা বলতেছিলো। তখন এইটাকে উর্দুতে বলছে আর কি।

তবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় ছেড়ে এসব নিয়ে আলাপকে সময় নষ্ট বলেই মনে করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, আমার কষ্ট লাগে যে, এসময়টা অনেক ভালো ভালো কাজে ব্যয় করতে পারি, এভাবে ক্রিটিসাইজ (সমালোচনা) করার কিছুতো নাই।

সামাজিক মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া

ভিডিওতে উপস্থিত ব্যক্তিরা এক ঘরোয়া আড্ডায় হালকা মেজাজের আলাপ বলে দাবি করলেও এনিয়ে সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।

ভিডিওটি শেয়ার করে লোপা হোসেইন নামে একজন লিখেছেন, উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা - মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ক্যাপশনে হাতেতালি দেওয়ার তিনটি ইমোজিও দিয়েছেন তিনি।

আরেক ব্যবহারকারী লিখেন, কাজী ইব্রাহিম কেন মজলিসে উর্দু বলছেন জানি না। কিন্তু ওনার উর্দু উচ্চারণ এত জঘন্য, এত জঘন্য উচ্চারণ আমার হইলে আমি মুখই খুলতাম না কখনো। অবশ্য এই জন্যই আমার বাংলা বাদে অন্য ভাষায় দক্ষতা ওইভাবে আসে নাই।

এনিয়ে মজা করে রুমান শরীফ লিখেছেন, আয়মান সাদিকের উচিত ১০ মিনিট স্কুলে উর্দু ভাষা কোর্স চালু করা। মুনজেরিন একটা বই বের করলো সহজ উর্দু ভোকাবোলারি। কি বলেন?

তবে উর্দুতে কথা বলার পক্ষেও মত দিয়েছেন কেউ কেউ। পুলিন বকশী নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, ‘ইংরেজি একটি স্মার্ট ল্যাঙ্গুয়েজ। এখনকার হুজুরেরাও ফটাফট ইংরেজিতে নানা শব্দ বলে। কিন্তু উর্দু! না বাবা এ ভাষা বলা যাবে না। এ ভাষায় বলে দেশটাকে পাকিস্তান বানানো যাবেনা। মুরব্বি… উহু’

অনেকটা একই কথা বলেছেন সালাহউদ্দিন আহমদও। তার মতে, কেউ ইংরেজিতে যেমন কথা বলতে পারে, তেমনি অন্য কোনো ভাষাতেও কেউ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারে। এটাতো কোনো আনুষ্ঠানিকতা না, ঘরোয়া আলাপ। উনিতো কোনো ভাষণ দেয় নাই বা অনুষ্ঠানে কথা বলে নাই।

মন্তব্য করুন


Link copied