আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৮ মার্চ ২০২৫ ● ৪ চৈত্র ১৪৩১
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৮ মার্চ ২০২৫

উপদেষ্টা আসিফের বই: অফলাইন-অনলাইনে চলছে ‘ইতিহাস’ উপস্থাপন নিয়ে বিতর্ক

সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, বিকাল ০৫:৩৪

Ad

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া রচিত ‘জুলাই: জন্মভূমি অথবা মৃত্যু’ বইটি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শনিবার (১৫ মার্চ) বইটির মোড়ক উন্মোচন হওয়ার পর বইটিতে উপস্থাপিত কয়েকটি বিষয় নিয়ে ফেসবুকে সহযোদ্ধারা প্রশ্ন তুললে পরের দিনই সেটির ব্যাখ্যাও দেন উপদেষ্টা আসিফ। তারপরও চলছে দুই পক্ষের যুক্তির কাটাছেঁড়া।

গত দুই দিনের ফেসবুক স্ট্যাটাস বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বইটিতে যুক্ত করা একটি ছবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েমকে ‘বাদ দেওয়া হয়েছে’ বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও ‘অভ্যুত্থানের স্লোগান’ ও ‘ইতিহাস’ বিকৃতির অভিযোগও তুলছেন কেউ কেউ। এমনকি এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর প্রসঙ্গ টেনে লেখার একটি অংশ নিয়ে খোদ হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন।

‘হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন’—এমন একটা স্টেটমেন্টকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্কে আব্দুল্লাহ হিল বাকী নামে এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন, ‘লাস্ট প্যারাটা ফেব্রিকেটেড। জাস্ট ডিসটোরশন অব হিস্ট্রি। আমরা ক্যান্টনমেন্ট যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। কাওরান বাজার থেকে জুনায়েদ সাকি ভাই আমাকে গাড়িতে তোলেন। গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল। আসিফ প্রথমে কল দিয়ে বলে এএফপি’র অফিসে যেতে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রস করে গাড়ি পৌঁছালে আমি নেমে যাই। তখন আসিফ কল করে বলে—আপনি চ্যানেল ২৪ অফিসে আসেন। সাথে সাথে আমি সারজিসকে কল দিই। সারজিস তখন বাংলামোটরের দিকে ছিল। ওখান থেকে সারজিসকে সাথে নিয়ে আমরা চ্যানেল ২৪ অফিসে যাই। ভিডিওতেই দেখা যাচ্ছে—আমার সাথে গাড়িতে কে ছিল। আর গাড়ি বাংলামোটর থেকে কোনদিকে যাচ্ছিল।’

অবশ্য এরইমধ্যে নিজের লেখা বইয়ের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন আসিফ মাহমুদ। তিনি নিজেও স্পষ্ট করেছেন যে এই বই পুরো ইতিহাস নয়। তিনি লিখেছেন, ‘‘বইটা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, সম্পূর্ণ গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস না। ‘জুলাই, মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইটা আমার চোখে গণ-অভ্যুত্থানকে যেভাবে দেখেছি, সেই অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা’’, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি আসিফ মাহমুদের অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণ গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস হিসেবে ধরে নেওয়া ভুল হবে। গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন অন্তত আরও কয়েকশ’ জন তাদের অভিজ্ঞতা লিখবে। এছাড়া বইটি সংক্ষিপ্ত, এখানে অনেক বড় ঘটনাকেও এক লাইনের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। মাত্র ১২০ পৃষ্ঠায় আমার নিজের অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বর্ণনা সম্ভব নয়। পরবর্তীকালে ফ্রি সময় পেলেই এই বইয়ের টাইমলাইন ধরে ধরে বিস্তারিত লিখবো, ইনশাআল্লাহ। বিস্মৃত হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই ছোট আকারে প্রাথমিকভাবে লিখে রাখা।’

জুলাই আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘জুলাইয়ের ১৪ তারিখের স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগান ছিল, ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার’, ‘কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’, এই স্লোগান দেওয়ার সাহস তখনও গুটিকয়েক ব্যক্তির ছাড়া আর কারও ছিল না। তাই জনপরিসরে এই স্লোগান যুক্ত হতে সময় লেগে গেছে কয়েক দিন। এরপর স্লোগান হয়ে ওঠে, ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার!’, ‘কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। অথচ আসিফ মাহমুদ ১৪ সেপ্টেম্বর এসে ১৪ জুলাই এর স্লোগানই পালটে দিলেন। তার বইয়ের কাভারে দিয়েছেন ১৪ জুলাই নাকি ‘আসছে ফাগুনে আমরা দ্বিগুণ হবো’ এই স্লোগান ছিল।’’

আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা আরেক শিক্ষার্থী এবি যুবাইর বাংলা বলেন, ‘সম্প্রতি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ যে বই লিখেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে তার বইটি একটি পক্ষপাতমুক্ত নিরপেক্ষ জায়গা থেকে লেখা হবে—এটাই আমাদের আশা ছিল। বইটি পাবলিশ হওয়ার পরে আমরা ভেতরে বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখতে পেয়েছি। তিনি নিরপেক্ষতার জায়গা থেকে লিখতে পারেননি বলেই মনে হয়েছে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, ‘এখানে কোনও বিতর্কই সৃষ্টি হয়নি। আসিফ ভাই শুধুমাত্র ওনার জায়গা থেকে যা দেখেছেন, সেগুলোই লিখেছেন। ইতিহাস তো এভাবেই তৈরি হবে। মানুষ তার নিজস্ব জায়গা থেকে তাদের অভিজ্ঞতা লিখবে। ১০ জন মানুষের আলাদা আলাদা পারসপেক্টিভ থেকে বর্ণনা করা ঘটনাগুলো যখন একত্রিত হবে, তার সম্মিলিত রূপেই ইতিহাস তৈরি হবে।’

মন্তব্য করুন


Link copied