আর্কাইভ  রবিবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ● ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২৫

পানি শুন্য তিস্তায় চাষাবাদ ব্যাহত

শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, রাত ০৯:২৮

Advertisement

হাসানুজ্জামান হাসান: তিস্তার নদীর হারানো যৌবন ফিরে আনতে এবং ভারতের আগ্রাসনের কবল থেকে রংপুর অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার উৎস তিস্তা নদীকে তার চিরচেনা রূপে ফিরে আনা ও নদীতে পাল তোলা নৌকায় মাঝি ভাটিয়ালী গান এবং জীববৈচিত্র রক্ষা করতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা জরুরি। ভারতের নদী আগ্রাসনে পানির অভাবে ধু ধু বালু চরে পরিণত হয়েছে সর্বগ্রাসী খরস্রোতা তিস্তা।
 
বর্তমানে তিস্তানদী পানিশূন্য। তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় চর জেগে উঠেছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ।বিপাকে পড়েছে জেলে ও মাঝি সম্প্রদায়। চরম দুর্দিন পার করছেন তিস্তাপাড়ের মানুষেরা। একসময় এই তিস্তা নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষিকাজ করতো তিস্তা পাড়ের মানুষেরা। ধান,গম, ভুট্টা,সবজি সহ নানা রকম ফসল ফলাতো তারা। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো জেলেরা।
 
মাঝিমাল্লারা সারাদিন ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু বর্তমানে তিস্তা পানি শুন্য। চারিদিকে জেগে উঠেছে চর আর চর। নদীতে কোথাও হাঁটুর নিচে পানি কোথাও আবার পানি শূন্য। পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করছেন কৃষকেরা। ফলে ব্যয় ও শ্রম দুটোই বাড়ছে। চাষাবাদ করে লোকসান গুনছেন কৃষকরা।
 
লালমনিরহাট কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, তিস্তা চরাঞ্চলে ৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করেছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। তিস্তায় পানি না থাকায় চরাঞ্চলগুলোতে ফসল চাষে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। ডিজেল চালিত সেচ পাম্প লাগিয়ে কোন রকম পানি দিচ্ছে।
 
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শুষ্ক মৌশুমে তিস্তায় ৩ থেকে ৪ হাজার কিউসেক পানি থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৪ থেকে ৫শ' কিউসেক।যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তিস্তায় পানি কমে যাওয়ায় তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পও কোন কাজে আসছে না।
 
ভারতের সিকিম থেকে উৎপত্তি হওয়া তিস্তা নদী লালমনিরহাট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ১১৫ কিলোমিটার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তার নাব্যতা সংকট রোধে তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামে এক প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের আপত্তির কারণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। তাই তিস্তা পাড়ের মানুষ চরম দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।
 
নদীর নাব্যতা সংকটে বর্ষাকালে দেখা দেয় ব্যাপক বন্যা আর নদীভাঙ্গন। বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্রতি বছরে বাস্তহারা হয় হাজার মানুষ।শুষ্ক মৌসুমে জেগে উঠে চর। এদিকে তিস্তা নদীর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও তিস্তার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই শিরোনামে আন্দোলন কর্মসূচি চলমান রয়েছে। চলতি বছরের ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী তিস্তাপাড়ের ১১ টি পয়েন্টে ৪৮ ঘন্টার লাগাতার কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, তিস্তা পাড়বাসীসহ সাধারণ মানুষ। এ আন্দোলন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। দ্বিতীয় দিনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এ আন্দোলন কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নেতৃবৃন্দ।
 
তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, উত্তরের জীবনরেখা তিস্তা নদী। প্রতিবেশী দেশের কারণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন আটকে আছে। ফলে এখানে চাষাবাদ ব্যাহত সহ নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে স্থানীয় মানুষের উপর। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে উত্তরের মানুষ। আমরা তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন শুরু করেছি। তিস্তাপাড়ে লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে রেলি, আলোচনা সভা,সেমিনার,হেঁটে তিস্তা নদীপার, গণসংগীত, তিস্তাকেন্দ্রিক নাটক,সিনেমা প্রদর্শন ও মশাল প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দেশ ও বিদেশের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোতে তিস্তার এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মানুষজনের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি আমরা।অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের দাবী তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার।
 
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার জানান, তিস্তা বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিক তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য। এ লক্ষ্যে চায়না পাওয়ার কোম্পানি ও বাংলাদেশের সরকারের উদ্যোগে তিস্তাপাড়ে ইতিমধ্যে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় মানুষজনের মতামত নেয়া হয়েছে। অল্প সময়ে আশার আলো দেখতে পাবেন তিস্তা পাড়ের মানুষ।

মন্তব্য করুন


Link copied