আর্কাইভ  সোমবার ● ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ● ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৮ এপ্রিল ২০২৫

রংপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে তছনছ বাড়িঘর, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, রাত ০৯:৫২

Advertisement

মমিনুল ইসলাম রিপন রংপুর।। রংপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে কয়েকটি উপজেলার বেশকিছু গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। উড়ে গেছে ঘরের টিনের চাল। বেশ কিছু এলাকায় গাছ উপড়ে ও ডাল পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঝড় শুরু হয়। প্রায় ১৫ মিনিটের ঝোড়ো হাওয়ার পর শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। ১১টা ১০ মিনিট পর্যন্ত চলে এই ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির তাণ্ডব। কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে সবচেয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তারাগঞ্জ ও গংগাচড়া উপজেলায়।

এছাড়াও রংপুর মহানগরী, বদরগঞ্জ, পীরগাছা উপজেলার বেশকিছু এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও আবহাওয়া অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি।

জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের ওমর মিয়া জানান, তার বাড়িতে গাছ উপরে পড়ে দুটি পাকাঘর ভেঙে গেছে। পাশাপাশি তামাকসহ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। একই ইউনিয়নের আব্দুল জব্বার বলেন, ইকরচালি বাজার সংলগ্ন বটের গাছ ঘরের উপর উপরে পড়ে তিনটি পাকা ঘর ভেঙে গেছে। বাজারের অনেক দোকানের ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও গাছপালা উপড়ে পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় সমাজসংগঠক বিপ্লব হোসেন অপু জানান, তারাগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে অন্তত দুই শতাধিক ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। এই কালবৈশাখী রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। রাতে তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে বলে জানান তিনি।

গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের , বাগপুর, মনিরাম, কোলকোন্দ ইউনিয়নের গোডাউনের হাট, পীরের হাট, কুটিরপাড়, আলমবিদিতর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ি, মণ্ডলেরহাট, শয়রাবাড়ি, নোহালি ইউনিয়নের নোহালিহাট, আনোরমারি, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় এস এম ইকবাল সুমন।

তিনি আরও জানান, রাত সাড়ে দশটার দিকে হঠাৎ শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। এতে গাছপালা উপড়ে পড়ে এবং বাড়িঘর ভেঙে যায়। কারো কারো ঘরের চাল উড়ে গেছে। ধসে পড়েছে বাড়ির দেয়ালও। ক্ষতি হয়েছে তামাক, ধান, লিচু, আম ও কলাগাছের।

এদিকে পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর, ছাওলা, অন্নদানগর, কান্দিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে গাছপালা উপড়ে পড়ে বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ ও কাউনিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আহত শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ঝড়ের কারণে ভেঙে পড়েছে অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই। গ্রামেগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের তার ছিঁড়ে পড়েছে।

ইকরচালি বাজার এলাকার বিজয় মন্ডল জানান, ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল ১০ থেকে ১৫ মিনিট। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে ঝড়ে গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি, গাছগাছালি ও উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌর এলাকার ডালিম মিয়া বলেন, রাতে যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি চলছিল, তখন হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ে বাতাসের খুব বেগ ছিল। আমার নিজের দুটি ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। অনেক গাছগাছালি ভেঙে পড়েছে। আশপাশের ঘরবাড়িসহ গ্রামের অনেকের বাড়িঘর ভেঙে তছনছ হয়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, রাতে কালবৈশাখী ঝড় থেমে যাওয়ার পর বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। অনেক বাড়িঘর ভেঙে গেছে। দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে তালিকা করে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম বলেন, ঝড়ে গাছপালার কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধান ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির কিছুটা ক্ষতি হলেও ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ-এর আওয়াতাধীন গঙ্গাচড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম আইযুব আলী বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। রাত ১০টা থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করতে রাত থেকেই কাজ চলছে।

এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শনিবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল। এসময় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ঝড়ে কিছু এলাকায় ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নিরুপণে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।

মন্তব্য করুন


Link copied