আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ● ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ২৯ এপ্রিল ২০২৫

হামলা পরিকল্পনায় মোদি

মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, সকাল ০৯:২০

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত চরমে পৌঁছেছে এবং এই উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উত্তেজনা নিরসনসহ সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়ে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ভারত এখন সংঘাত এড়াতে নয় বরং পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে কাশ্মীর সীমান্তে ফের গোলাগুলি হয়েছে। পাকিস্তানের ১৩০ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত, এমন মন্তব্য করেছেন দেশটির একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। ভারতে ১৬ ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ ও বিবিসিকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

২৭ এপ্রিল প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। পাশাপাশি দিল্লিতে অবস্থিত শতাধিক কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত আলোচনা চালাচ্ছে। তবে ভারতের এ প্রচেষ্টা মূলত আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইতে নয়, বরং (পাকিস্তানে) সামরিক অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চারজন কূটনৈতিক কর্মকর্তা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক ভাষণে মোদি সরাসরি পাকিস্তানের নাম না নিলেও ‘সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো ধ্বংস করার’ এবং ‘কঠোর শাস্তি’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা পাকিস্তানের অতীতের সন্ত্রাসবাদে সহায়তার ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তারা জানান, সর্বশেষ এই হামলার ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং হামলাকারীদের পাকিস্তানের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন কিছু প্রযুক্তিগত প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, এখন পর্যন্ত শক্ত প্রমাণের অভাব দুটি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয় : হয় ভারত আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় নিচ্ছে, নয়তো বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তারা মনে করছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়েই পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখ করেছে, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়ায় সামরিক সংঘাত দ্রুত বড় ধরনের বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে। তবে বর্তমানে ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক চাপের ‘তোয়াক্কা অনেক কম।’ ইরান ও সৌদি আরব দুই পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই সংযম ও সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় শক্তিগুলো এখন অন্য সংকট নিয়ে ব্যস্ত, ফলে ভারত অনেক দেশ থেকে ‘সমর্থন’ পাওয়াকে কার্যত তার ইচ্ছামতো ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের বন্ধু হলেও দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান পরিস্থিতিতে কতটা সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখবে, তা স্পষ্ট নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম তিন মাস পার হয়ে গেলেও এখনো ভারতে কোনো মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আর এটি দক্ষিণ এশিয়াকে ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকারের তালিকায় নিচে থাকার ইঙ্গিত দেয়। এমনকি যদি যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য শক্তিধর দেশ এ সংঘাতে নিজেদের ঢুকিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করে, তবুও তাদের প্রভাব সীমিত থাকতে পারে। কারণ ভারত ও পাকিস্তান এরই মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে কয়েকটি যুদ্ধ করেছে। উভয় দেশই কাশ্মীরের সম্পূর্ণ অংশ দাবি করলেও তারা কার্যত একটি অংশ শাসন করে এবং নয়াদিল্লি এই বিরোধটিকে কেবল পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হিসেবে দাবি করে থাকে। তবে এবার ভারত ‘বড় ধরনের কিছু’ করার পরিকল্পনা করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে। তারা বলেছে, ভারতের যেকোনো আক্রমণের সঙ্গে পালা দিয়ে তার চেয়ে বড় আঘাত হানবে তারা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন মনে করেন, মোদি সরকারের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছিল ভারত। মোদি সরকার এখন চাপের মধ্যে রয়েছে, কারণ তারা কাশ্মীরকে সম্প্রতি আরও নিরাপদ এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় একটি জায়গা হিসেবে উপস্থাপন করছিল, অথচ সেখানে বড় ধরনের নিরাপত্তা ত্রুটি দেখা দিয়েছে।

মন্তব্য করুন


Link copied