আর্কাইভ  বুধবার ● ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ● ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ৩০ এপ্রিল ২০২৫

নীলফামারীতে উত্তরা ইপিজেড কারখানার আবারো মেশিন বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ দুই শ্রমিক

মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, বিকাল ০৭:৩২

নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডের একটি কারখানায় মেশিন বিস্ফোরণে দুই শ্রমিক আহত হবার ঘটনায় মঙ্গলবার ইপিজেডের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে।

Advertisement

স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ ২৩ দিনের মাথায় নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের একটি কারখানায় আবারও মেশিন বিস্ফোরণের ঘটনায় দুইজন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার(২৯ এপ্রিল) বেলা সোয়া ১১টার দিকে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে অবস্থিত সনিক কারখানার (খেলনা তৈরির কারখানায়) ডায়াস্টিক মেশিন বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হন। আহত দুই শ্রমিক হলেন লিটন চন্দ্র রায় (২৫) ও দেলোয়ার হোসেন (২৮)। এঘটনার দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ইপিজেডের শ্রমিকরা বের হয়ে বিক্ষোভ সহ সড়ক অবরোধ করে। 
উত্তরা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সিনিয়র স্টেশন অফিসার খুরশীদ আলম জানান, সাড়ে ১১টার দিকে সনিক নামের একটি কারখানা থেকে দগ্ধ অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে নীলফামারী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনি জানান, এদিকে ঘটনায় দেখে কারখানার এক নারী শ্রমিক মিনি আক্তার(২২) জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকেও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 
জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ আব্দুর রহীম জানান, আহতদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। অসুস্থ অবস্থায় আরেক শ্রমিক মিনি আক্তারকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে রিলিস করে দেয়া হয়। 
এদিকে বিস্ফোরনের পর উত্তরা ইপিজেদের ওই কারখানার সকল শ্রমিক বাহিরে নেমে আসে এবং বিক্ষোভ করে ওই কারখানার মালিকের বিচার দাবি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এ পর্যায়ে শ্রমিকরা অসন্তোষ হয়ে উঠে ওই কারখানার ভিতরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং নীলফামারী-সৈয়দপুর মহাসড়কের ইপিজেড মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে নীলফামারী জেলা সদরের ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, র‌্যাব এবং অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। 
নীলফামারী সদর থানার ওসি এম আর সাঈদ বলেন, দুই বোনের ঘটনাটি ওই বাড়িতে গিয়ে পরিদর্শন করা হয়।এছাড়া উত্তরা ইপিজেডের ঘটনায় শ্রমিকরা বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল। সেখানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখা হয়েছে। 
এবিষয়ে কথা হলে উত্তরা ইপিজেডের বেপজার নির্বাহী পরিচালক (ইডি) আব্দুল জব্বার জানান, কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের সাথে কথা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। 
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু শ্রমিক জানায়, ওই ফ্যাক্টরিতে হঠাৎ করে কাজের চাপ বেড়ে গেছে। ২৪ ঘন্টায় তিন ধাপে শ্রমিকরা কাজ করছে। ফলে খেলনা তৈরীর মেশিন গুলো বিশেষ করে ডায়াস্টিক মেশিন বন্ধ করা হয় না। সেখানে মেশিন গুলো ৩ ঘন্টার পর আধা ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখতে হয় তারপর আবারও চালু করে কাজ করতে হয়। ধারনা করা হচ্ছে ডায়াস্টিক মেশিন গরম হয়ে বিম্ফোরন ঘটেছে। এঘটনার পর ওই কারখানায় কাজ বন্ধ রেখেছে শ্রমিকরা। শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, কারখানার মেশিনগুলি সঠিক সময় ঠিক মতো সার্ভিস করে না কর্তৃপক্ষ। মাঝে মাঝে মেশিন বন্ধ হয়ে গেলে কয়েকঘন্টা কাজ থেমে থাকে। 
শ্রমিকরা আরও জানায়, এর আগে চলতি বছরের গত ৬ এপ্রিল রাত আটটার দিকে ডায়াস্টিক মেশিন বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই শ্রমিক রমজান আলী (২৬) ও খায়রুল ইসলাম (২৫) অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল। তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল খায়রুল ও ১২ এপ্রিল রমজান মারা যায়। এরপরেও সনিক কারখানাটির কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। 

মন্তব্য করুন


Link copied